Sunday, June 3, 2012

মকর (২২ ডিসেম্বর-২০ জানুয়ারি) : সাধারন বৈশিষ্ট্য

কীভাবে চিনবেন

সাধারণভাবে তরুন মকরদের বয়স্ক মকরদের থেকে বেশি তৃপ্ত বলে মনে হয়। এর পেছনে কারণও রয়েছে। চাইনিজ তরুণ মকররা তাদের পূর্বপুরুষ এবং বয়স্কদের নিজেদের আদর্শ বলে মনে করে। বয়স এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যে জ্ঞান অর্জিত হয় সেটার প্রতি শ্রদ্ধা শনি-শাসিত ব্যক্তিদের হৃদয়ে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত। তারা যখন বয়স্ক হয়ে ওঠে আর ‘সম্মানিত পূর্বপুরুষ’ এবং বয়স্ক মানুষগুলো তাদের ছেড়ে চিরদিনের মতো চলে যায় তখন নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বন্য কার্যকলাপ, উগ্রতা এই রক্ষণশীল মকরদের বিভ্রান্ত এবং ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। নিজেদের মাথা ঝাঁকিয়ে পুরনো দিনের কথা বিড়বিড় করতে করতে তারা বলতে শুরু করে, ‘ছ্যা! ছি!’ সৌভাগ্যজনকভাবে, তাদের মধ্যে অনেকেই এই নতুন চ্যালেঞ্জটাকে নিজের মধ্যে গ্রহণ করতে সমর্থ হয়। একজন বয়স্ক ধূসর চুলের মকর যখন আনন্দিতচিত্তে ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে খেলা করে আর মনে মনে ভাবে শৈশবের সেই আনন্দমূখর দিনগুলো গম্ভীরভাবে কাটিয়ে দিয়ে কী সুখ থেকেই না বঞ্চিত হয়েছি­ তখন দৃশ্যটা সত্যিই উষä অনুভূতিদায়ক। বৃদ্ধ মকররা হয় হতাশ আর মুখগোমরা হয়ে উঠবে, নয়তো সুখিচিত্তে হাসি-আনন্দে, নৃত্যরসে তাদের সময় অতিবাহন করবে। আবার এই দুই দলের মাঝামাঝি একটি দল রয়েছে, যারা প্রচণ্ড হাসি চাপলেও মৃদু হাস্য ছাড়া আর কিছুই করবে না। আবার গান শুনলেও অতি আনন্দে উতলা হওয়া থেকে নিজেদের অহেতুক পিছু হটিয়ে রাখবে।  



মকরদের খাড়া এবং সুন্দর আকৃতির নাকটাকে অন্যের ব্যাপারে গলতে দেখবেন না, দেখলেও সেটা কদাচিৎ। কিংবা শনি-শাসিত ব্যক্তিদের জিভটাকেও অন্যদের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকতে দেখবেন না। তবে মকরদের উপর মিথুন বা মীনের প্রভাব থাকলে, তাদের মধ্যে সামান্য পরিমাণে অন্যদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে আগ্রহ দেখা দিতে পারে। কিন্তু সাধারণত তারা নিজেদের ব্যাপারেই নিমগ্ন থাকতে বেশি পছন্দ করে। তারা হয়তো যেচে পড়ে আপনাকে পরামর্শ দিতে যাবে না, কিন্তু আপনি যদি স্বেচ্ছায় তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে কোন পরামর্শ শুনতে চান তাহলে তারা তাদের পরামর্শ দিতে মোটেও দ্বিধা করবে না। এবং তাদের প্রত্যাশা থাকবে এটা আপনি গ্রহণ করবেন। মকররা দায়িত্ব এবং কর্তব্যবোধ মেনে চলতে শিখেছে আর হতাশাকেও সহ্য করে থাকতে জানে। আপনি যদি তার উদাহরণ অনুসরণ করতে না পারেন তো ভুল কিভাবে সংশোধন করতে হয় সেসব শেখানোর জন্যে সে সময় নষ্ট করবে না। আর সমবেদনা জানানোর ক্ষেত্রেও তার আবেগ হবে ক্ষীণ।



যেহেতু ছাগলের প্রতীকধারী এই মকর জাতকরা খুব ভদ্রভাবে কোন একটা দলে নিজেদের অবস্খান করে নেয় আর নিজের অজান্তেই পেছনের সারিতে নিজেকে ঢেকে ফেলে সেহেতু এই রাশির জাতক-জাতিকাদের শারীরিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে চিনে ফেলাটা একটু দুরূহ। মকর হতে পারে চওড়া কাঁধ বিশিষ্ট এবং পুরুষালী। আবার চিকন কিন্তু শক্ত-সামর্থ। কিংবা নাদুস-নুদুস আর নরম। কিন্তু তার শারীরিক বৈশিষ্ট্য যাই হোক না কেন, সে যেখানে থাকবে সেখানে শেকড় গেড়ে থাকার মতো একটা লক্ষণ তার মধ্যে দেখতে পাবেন।


অবশ্য যতক্ষণ না সে অন্য কোথাও আবার শেকড় গাড়তে না যাচ্ছে। সাধারণত শনি-শাসিত মানুষদের চুলগুলো হয় সোজা, রুক্ষ, কালো; তাদের চোখও কালো এবং ধীর-স্খির। তাদের গায়ের রঙ হয় শ্যামলা বা রোদে পোড়া। কিছু মকর পাবেন যাদের চুলগুলো কোঁকড়া আর সোনালী রঙের আর চোখগুলো নীল। কিন্তু মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করুন। এখন সৎ ভাবে মন্তব্য করুন দেখি, তাদের দেখে কি মনে হয় না যে কালো চুল আর কালো চোখ নিয়েই এদের জন্ম নেয়া উচিত ছিল? যদিও উক্তিটার কোন শক্ত ভিত্তি নেই, কিন্তু এটার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মারলিন ডাইট্রেচের কথাই ধরুন। ড্রেসডেন-চায়না কমপ্লেক্সন তার গায়ের রঙ, চোখ দুটো সবুজ আর চুলগুলো সিল্কি। আরেকবার তাকান। খুব শান্ত চিত্তে তাকে লক্ষ্য করুন, তার প্রশান্ত আর সাবলীল সক্রিয়তা। তার গভীর আর নিচু কণ্ঠস্বরটি শুনুন। ব্যবসার ব্যাপারে তার সতর্ক বুদ্ধিমত্তা এবং তার পার্থিব আকাঙ্খার প্রতি নজর দিন। এ সব বৈশিষ্ট্যগুলো কি একজন কালো চুলের সাদা মানুষের সঙ্গে মিলে যায় না? এই সূক্ষ্ম সুত্রটি আয়ত্ত্বে আনুন। তাহলেই চেহারা দেখে মকর চিনতে আর ভুল হবে না।



শনি-শাসিত মানুষগুলোর মধ্যে বিষণíতার একটা ক্ষীণ আভাস আর গাম্ভির্যের সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। তাদের কেউই শনির প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। এ কারণে তাদের মধ্যে খুবই নিয়মানুবর্তিতা এবং আত্ম-অস্বীকৃতির প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অনেক মকরই শক্ত ও মজবুত পায়ের অধিকারী এবং তাদেরকে পায়ের উপযুক্ত জুতো পরতে দেখা যায়। তারা সুঠাম হাতের অধিকারী এবং তাদের কণ্ঠস্বর প্রশান্ত। আপনি হয়তো তাদের মধ্যে তোষামুদে ভদ্র আচরণ এবং প্ররোচণাময় ব্যবহার লক্ষ্য করবেন। মকরদের দেখলে মনে হবে তারা যেন মখমলের কাঁথার মতোই নিরীহ। কিন্তু কাঠের টুকরোর উপরে চোখা তারকাটার মতোই তারা রুক্ষ। তারা অবিরত, অবিরাম অপমান, চাপ এবং হতাশার বোঝা হজম করে চলে। ঠিক যেমনিভাবে ছাগলগুলো টিনের ক্যান, ভাঙা গ্লাস থেকে শুরু করে কার্ডবোর্ডও হজম করে ফেলে। মকরের মতোই ছাগলদেরও একটা লৌহ পাকস্খলি রয়েছে। রয়েছে বিপজ্জনক শিং-ও। যখন উৎফুল্লচিত্ত হাসি-খুশি বর্হিমূখি মানুষগুলো এখানে-ওখানে তাদের শক্তিক্ষয় করে বেড়ায়, তখন মকর তার স্খান থেকে এক চুল পরিমাণও বিচ্যুত হবে না। তারা বরং তাদের স্বভাবসুলভ আস্খা নিয়ে ধীরে-সুস্খে উপরের দিকে উঠতে থাকে। শর্ট-কাট পথগুলোতে বিভিন্ন প্রতিকুলতা দেখে তাদের অনুকম্পা হয়। বরং তারা পদচারণায় মুখর পথে চলতেই অধিক নিরাপত্তাবোধ করে।


মৃদু হাওয়া ছাড়া আর সবকিছুই মকরের চরিত্র বুঝতে পারবে। আপনি এই রাশির জাতক/জাতিকাদের চেনার শিক্ষাটা পাবেন কিন্তু তার আগে আপনার একটু প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। কোণার ওই শান্ত মাকড়সাটার দিকে নজর দিন। দ্রুত গতির উড়ন্ত পোকাগুলোর সঙ্গে লড়াই করার কোন ক্ষমতাই তার নেই। কিন্তু তার ধূর্ততার সঙ্গে বোনা জালে এসে পোকাগুলো ঠিকই ধরা পড়ে আর মাকড়সাটারই জয় হয়। এ্যাসপের কচ্ছপটির কথা স্মরণ করুন, ছন্দময় গতি নিয়ে যে দৌঁড় প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।


দ্রুতগতি সম্পন্ন, দূরন্ত খরগোশটার সঙ্গে জয়ের কোন সুযোগই তার ছিল না। কিন্তু খরগোশটি লক্ষ্যে পৌঁছানো বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করলো। ওদিকে জয় হলো কচ্ছপটারই। আবার সেই ছাগলটার কথাই ধরুন, যেটা পর্বত আরোহণ করছিল। তার চেয়ে দক্ষ মানুষ যারা কৌশলে এবং চলনে তার থেকে অনেক বেশি সুচারু­ তারা তাকে ধরার জন্যে পিছু নিয়েছিল। কিন্তু শক্ত-সমর্থ ছাগলটা যখন স্খিরচিত্তে তার মৌলিক ডিজাইনের খুর ফেলে পাথর থেকে পাথরে উঠতে থাকলো। আর শিকারীরা সবাই তার অনেক পেছনে পড়ে গেল­ ছাগলটাই জয়ী হলো।



আসুন এখন মকর নিয়ে গবেষণা করা যাক। আপনি কোথায় তার খোঁজ পেতে পারেন? যেখানে সে নিজের উন্নতি এবং নিজেকে অগ্রসর করে নিতে পারবে তেমন যে কোন স্খানে তাকে পাবেন। যে স্খানে গেলে সে তার নিজের গোপন উচ্চাকাংঙ্খা এবং সমূখে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে­ সেখানেই সে থাকবে। সামাজিক সমাবেশে খোঁজ করে দেখতে পারেন। মকর কিন্তু বেপরোয়াগোছের পার্টিমনস্ক কোন ব্যক্তি নয়। আমরা যে ছাগল প্রতীকধারীকে খুঁজে বেড়াচ্ছি সে আসলে সমাজের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে আগ্রহী, বলাবাহুল্য একজন পর্বতারোহীও বটে। বিভিন্ন স্তরের মানুষ নিয়ে একটি দল খুঁজে বের করুন, পারলে যাদের উপার্জন বেশি তাদের। আপনি অবশ্য মধ্যম আয়ের ব্যক্তিদের দলটিতেও খুঁজে দেখতে পারেন। তবে যতোই নিচের স্তরে যাবেন ততোই সেখানে আপনার মকরটিকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকবে। সম্ভবত সে তার মাথায় কোন ল্যাম্পশ্যাড পড়ে ট্যাপ নৃত্য (জুতোর গোঁড়ালি দিয়ে শব্দ করে নৃত্য) করে বা কোনভাবে নিজের প্রতি অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় লিপ্ত হবে না। বরং দর্শকদের সারিতে দাঁড়িয়ে সে প্রশংসায় লিপ্ত হবে। জমকালো, রগরগে, চটকদার এবং ঝলমলে মানুষগুলোকে সে যখন শান্ত এবং স্খিরভাবে লক্ষ্য করায় ব্যস্ত থাকবে তখন হয়তো আপনার তাকে খুঁজে পেতে একটু কষ্ট হবে। উপস্খিত প্রত্যেকের মধ্যেই দৃশ্যত প্রতিযোগিতাতেথ­ সেটা যে প্রতিযোগিতাই হোক না কেন­ জয়ের কোন ভালো উপাদান বা উপকরণ বা গুণ থাকবে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই ভান করে আছে, এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে মনে ভীতও বটে। কিন্তু তারা সবাই খুব সূক্ষ্মভাবে পলিশ করা ব্যক্তিত্ব। আর আপনার মকরটিকে দেখে মনে হবে এরকম মানুষগুলোর মাঝে জয়ের কোন আশাই তার নেই। কিন্তু তারপরও জয়টা সেই ছিনিয়ে নেবে।


হয় তাদের দাঁতগুলো হবে সুন্দর, সাদা এবং শক্ত নতুবা দন্তক্ষয়ের যন্ত্রণায় মুহুর্মুহু ডেন্টিস্টের কাছে ধর্ণা দিতে হবে। যদি সাধারণভাবে বলি তবে, তারা যদি দীর্ঘস্খায়ী বিষণíতার দরুন দীর্ঘস্খায়ী রোগের ভোগান্তি থেকে নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হয় তাহলে তাদের জীবনের প্রতি মায়া প্রশংসার দাবি রাখে। অবশ্য আর্থরাইটিস কিংবা রিউমাটিজম (বাতজ্বর) থাকলে গাছের শেষ পাতাটি হিসেবে ঝরে যাওয়াও (অনেক বয়স হয়ে মরার) নিশ্চয়ই কোন মজা নেই।



সুস্বাস্খ্যের জন্যে মকরদের উচিৎ সূর্যালোকে যাওয়া এবং বৃষ্টির মধ্যেও হাঁটা।



সে অত্যন্ত লাজুক এবং মিষ্টি মনের একটি মানুষ, যদিও তার মধ্যে যথেষ্ট জিদ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারেও সে বিনয়ী। দেখতে সে একেবারেই অসহায়। আস্খা রাখার জন্যে এবং নিজের গোপন কথা বলার জন্যে তার মতো নিরাপদ ব্যক্তিত্ব আর হয়ই না। আর তাছাড়া কী চমৎকারভাবেই না সে আপনার অহংকার বাড়িয়ে তোলে। কে তাকে আঘাত করতে পারে কিংবা তার মধ্যে উচ্চাকাংঙ্খা আছে বলে সন্দেহ করবে? কিন্তু পুরোটা সময় ধরেই সে আপনার ঈর্ষাবোধ, আত্মাভিমান ইত্যাদি ক্ষুদ্রতাগুলোকে পুঁজি করে নিজেকেই শক্তিশালী করে তুলছে। সে উপকারী এবং অবশেষে আপনার কাছে সে এতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে যে আপনি তার কাছে নিজের ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেবেন। তখন সে এক কোণায় বসে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করবে। কর্তৃত্বের সূতোগুলো তার বিনয়ী হাতের স্পর্শেই নড়তে থাকবে। একটি সত্যিকার নেতৃত্বের পদে নিজেকে অধিষ্টিত করার প্রতি তার যে আকাংঙ্খা সে আকাংঙ্খার কাছে সে নিজের আত্মগরিমাকে বিসর্জন দিয়ে দেয়। নিজের জ্ঞানকে তীব্র সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করে  অতীতকে উপেক্ষা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং বর্তমানকে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচায়। ফলে একটি নিরাপদ আগামীকাল তার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।



কোন উদ্যোগে তাকে ব্যান্ড বাজিয়ে অগ্রগামীর সারিতে থাকতে হবে তেমন নয়। সে প্যারেডের অনুমতি দেবে এবং দৃশ্যের অলক্ষ্যে থেকে পেছন থেকে প্যারেড পরিচালনা করবে। যেকোন সাহসী এবং উচ্চ উদ্দেশ্যসম্পন্ন পদক্ষেপ সফল করার জন্যে মকরকে প্রয়োজন হবে। তার নিরাপত্তার জালটিতে অন্যদের ভুলগুলো ঠিকই বাধা পড়বে। গাঢ় কালোর নিয়মানুবর্তিতা এবং আনুষ্ঠানিকতা, নেভী ব্লু’র বাস্তব প্রয়োগ বুদ্ধিসম্পন্নতা, ধূসরের গভীরতা, গাঢ় সবুজের স্বপ্ন­ এগুলোই তার সহ্যশীল রঙধনুটির বিভিন্ন রঙ। তার মনের শান্ত বনানী ধরে হেঁটে যান, সে বন নরম শ্যাওলা দিয়ে ছাওয়া আর বনলতা দিয়ে ঘেরা। আর শনির সেই আটটি গুপ্তধনের সন্ধান করুন। ঐশ্বর্যময়, লাল রুবী পাবেন মকরের উইপিং উইলো গাছগুলোর নিচে। সেখানে বসবাস করুন এবং রত্নের সেই বিশুদ্ধ আর মসৃণ বিকিরণের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। মকরের ধাতু কঠিন এবং তার জিদ দীর্ঘস্খায়ীভাবে জ্বলে।



মকররা সেই সব মানুষগুলোর প্রতি প্রচণ্ড শ্রদ্ধাশীল যারা তাদের আগে পর্বতের শিখরে উঠতে সক্ষম হয়েছে এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন নিয়মকানন প্রণয়ন করে গিয়েছে। তারা সফলতার প্রেমপূজারী। তারা কর্তৃপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ঐতিহ্যকেও সম্মান করে। অধিকাংশ উদ্যমী এবং আবেগী মানুষই তাদেরকে খবিশ এবং হাই-ক্লাস সোসাইটির পদমর্দনকারী এবং নিস্প্রাণ বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। একইভাবে মকরও তাদের সমালোচনা করে বলতে পারে যে তারা বোকা এবং হঠকারী। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় শত্রুতা বাড়ানোর মতো বিচক্ষণতা তার নেই।


শনি-শাসিতরা বরং আত্মসমর্পন করে। তারা একমত হয়। এবং নিজেদের মধ্যে অন্যদের ব্যাপারগুলো গ্রহণ করে। নাকি তারা শুধু এরকম কিছু করার ভান করে মাত্র? অন্যেরা এসে তাদের মুখোমুখি হবে তাতেই মকরদের মন ইতিবাচক সাড়া দেয়। কিন্তু সব যুক্তি নষ্ট করে তারাই উল্টো গিয়ে অন্যের মুখোমুখি হয়। প্রতিবন্ধকতা, এবং পথে পাথরে হোঁচট খাওয়ার ব্যাপারে সে যথেষ্ট সতর্ক। অবাক হবার কিছু নেই যে সে কদাচিৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে। তার দৃষ্টি তারাদের ওপর নিবদ্ধ। এবং সে তার চোখ সমূখের দিকে স্খির করে রাখে, তার পা দুটোও শক্ত ভিত্তি দেয়। ঈর্ষা, প্রণয়কাতরতা, আবেগী পদক্ষেপ, ক্রোধ, ছেবলামী, অপচয়, অলসতা, বেপরোয়া­ এগুলোই তার কাছে বাধাস্বরূপ। অন্যরাই বরং ভ্রমণ করতে গিয়ে এসবে হোঁচট খেয়ে পড়ুক, তার এতো কী দরকার। সে হয়তো ক্ষণিকের জন্যে পেছন ফিরে তাকিয়ে ব্যর্থদের জন্যে সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবে এবং অতীতের কোন একটি উপদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে। কিন্তু খুব শিগগিরই সে আবার তার এই উপরের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা শুরু করবে, যতক্ষণ না সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে।



কিছু কিছু মকর রয়েছে যারা আনন্দদায়কভাবে রোমান্টিক। তারা চাঁদের অদ্ভুত সুন্দর আলোটাকে উপভোগ করতে পারে। প্রজাপতির পাখার অপূর্ব সুন্দর রঙগুলোর মর্যাদা দিতে জানে। কিন্তু তারা আবেগের বশবর্তী হয়ে বাস্তবতা ভুলে যাবার মানুষ নয়। অন্তত যদি তারা শনির বৈশিষ্টসম্পন্ন সাধারণ জাতক হয়­ তাহলে তো নয়ই। যদি মকর কল্পনাপ্রসূত এবং ঘোরলাগা একটা সুন্দর কবিতা লেখে তবে সেটার থিমটা হবে খুব বাস্তবভিত্তিক। আর দাঁড়ি কমাগুলোও হবে সঠিক। কবিতার বিষয়বস্তু ঠিকই একটা নির্দিষ্ট কিছুকে উদ্দেশ্য করবে, এবং আবেগ সেটাকে ম্লান করতে পারবে না। মকরের শ্রদ্ধা পেতে চাইলে চিরাচরিত রীতি-নীতিগুলোকে অমান্য করবেন না। এমন কি যারা একটু বেশি সাহসী তারাও কিন্তু সমাজের গ্রহণযোগ্যতার কিছু কিছু মানদণ্ড ঠিকই মেনে চলে। জনসমাগমের স্খান, স্খূল, নগ্ন, এবং নিয়ন্ত্রণহীন প্রণয়কাতরতার দৃশ্য তাকে বিব্রত করে তোলে।



কিছু কিছু মকরের মধ্যে নিজের উচ্চাকাংঙ্খা লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে অসতর্কতা দেখা যেতে পারে। এদেরকে শীর্ষপদে অভিষিক্ত না করা হলে কাজ করার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সে জেদী মকর হয়ে ওঠে। সে চায় যে, মইয়ের সবচে উপরের তাকটাতেই সে দাঁড়াবে! কেননা সেখানে দাঁড়ানোর যোগ্যতা কেবল তারই আছে। স্বাভাবিকভাবেই, এ রকম আচরণ অবশেষে বিষাদগ্রস্ত, হতাশাবাদী, শীতল এবং স্বার্থপর গোছের ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করে। কোনভাবেই সে নিজেকে তৃপ্ত করতে পারে না। কিন্তু শক্ত দু’চারটা আঘাত পেলেই সে ঠিক পথে চলে আসবে আশা করা যায়।



বছর দুই আগে আমি নিউইয়র্কের একজন জ্যোতির্বিদের বইয়ের দোকানে গিয়েছিলাম। যখন আমি বেপরোয়াভাবে আমার জ্ঞানের স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছিলাম আর তার অনুরোধ বা আগ্রহ ব্যতিরেকেই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলাম­ কোন বইগুলো তার দোকানে রাখা উচিত! তার সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে যখন বিতর্ক করছিলাম তখন বুঝতে পারছিলাম যে সে একজন মকর জাতক। সেও বুঝেছিল আমি একজন মেষ জাতিকা।


তার উপর কোন প্রভাবগুলো রয়েছে সেটা অনুমান করে নিয়ে আত্মতৃপ্তভাবে আমি দ্রুত কথা বলে, দ্রুত নড়াচড়া করে দৃশ্যত সেখানকার কর্তৃত্বপরায়ণভাবটা নিজের ঘাড়েই নিয়ে নিলাম। আমি চলে আসার আগে সে আমার দিকে চেয়ে আকর্ষণীয় এবং ভদ্রভাবে হেসে, অদ্ভুত হাঙ্গেরিয়ান টোনে আমাকে একটা মজার কথা বলেছিল। সে বলেছিল, ‘মকররা মেষদের সবসময়ই মাড়িয়ে যাবে। ছাগলেরা সবসময়ই ভেড়ার সঙ্গে লড়াইয়ে জয় লাভ করবে।’ কথাটা সে বলেছিল দুষ্টুমির ছলে। কিন্তু সে যে গাম্ভীর্যের সঙ্গেই কথাটা বলেছে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। বুক স্টোরটার বাইরে দাঁড়িয়ে আমি নিজের মনেই হাসলাম। ‘চিন্তা করো তার কী আত্মঅহংকার!’ আমি ভাবলাম, ‘কেউই একজন দ্বিগুণ শক্তিসম্পন্ন মেষকে টপকে যেতে পারে না।’ কিন্তু কী ঘটেছিল জানেন? যখন কোন বিশেষ বই আমার দরকার কিন্তু জানতে পারি সেগুলো নূহ নবীর আর্ক তৈরির সময় থেকেই প্রিন্ট হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে তখন কোথেকে যেন এই মকর ব্যক্তিটি ওই বইগুলো নিয়ে হাজির হয়। এর ফলে দিনে দিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়তে থাকে। আর এখন আমি তার রাশিটির গুণগান লিখছি, যেগুলোর প্রতি আমি ঈর্ষান্বিত অথচ গুণগুলো আমার নেই। দেখলেন, সেই মকরেরই জয় হলো।



আরেকটা স্বীকারোক্তি। একজন মেষ হিসেবে, কারো কাছ থেকে কোন কিছু করার পদ্ধতি শুনতে আমার বিরক্তির শেষ নেই। সম্প্রতি শুনলাম, কোন একজন মকর নারী নাকি আমার লেখার মান যাচাই করার জন্যে একটা বই পড়ে দেখেছে। আমার মেজাজ সপ্তমে উঠে গেলো। বাইরে বাইরে যদিও সম্মতি দিলাম কিন্তু মনে মনে স্খির করলাম যে, আমার প্রতিভায় বিকশিত একটা শব্দও তাকে বদলাতে দেবো না। আমি শুধু তার সঙ্গে সহযোগিতার ভান করে থাকবো। অবশেষে সে তার সংশোধনীর নোটটা খুব ভদ্রভাবে, বলা যায় বিনীতভাবে আমাকে দিলো। আর সেটি ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমাকে দেখতে হলো। তার সংশোধনীটা দেখে আমার মনে হলো­ কেন আমি নিজেই সে সব প্রবাদ কিংবা বাক্যগুলো কেটে দেইনি? তার ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী আমার লেখাগুলোকে নিজের মতের বিরুদ্ধেই ঠিকঠাক করলাম। কষ্টদায়ক হলেও সত্য যে, আমার লেখাটা তারপর অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছিল। আবারও মকরের জয় হলো।



এরপর আমার মেষসুলভ মনটাকে বোঝালাম যে, মকরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা বৃথা। আপনারও হয়তো এটাই বুঝে নেয়া উচিত। খুবই জোর জবরদোস্তি করতে সক্ষম বিক্রেতাদের কথা মনে হলে মায়া লাগে। বেচারা হয়তো ভাবছে যে, ‘এই মকর একটা তুড়ি বাজালেই গলে যাবে। আমি তার কাছে যমুনা ব্রিজটাও বিক্রি করে দিতে পারবো।’ বেচারাকে এখনও অনেক কিছু শিখতে হবে।


আপনি হয়তো পড়ে থাকবেন যে মকররা টাকার জন্যে, কিংবা সামাজিক অবস্খানের লোভে বিয়ে করে। এটা অতিরঞ্জিত। ওই উক্তি করতে যিনি করতে পারেন তিনি নিশ্চিতভাবেই মকর। ‘দ্বিতীয় একটা ভায়োলিনের প্রতি প্রেমান্ধ হওয়া যতটুকু সহজ ঠিক ততটুকুই সহজ অর্কেষ্ট্রার প্রধান শিল্পীটির প্রেমে পড়া।’ বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন এই মকর ব্যবসা কিংবা বিয়ের জন্যে তখনই রাজী হবে যখন সে অর্থনৈতিকভাবে (প্রথমটির ক্ষেত্রে) এবং মানসিকভাবে (দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে) প্রস্তুত হবে। নিরাপত্তা লাভের জন্যে এই মানুষগুলো অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাজ করে।



শনি-শাসিত মানুষগুলোর মধ্যে বৃদ্ধ বয়সটা একটা হুমকিস্বরূপ। এমনকি কিশোর মকরটিও তার চাচা করিমউদ্দিন মিয়া এবং চাচি হাজেরা খাতুনের সঙ্গে দেখা করতে ছুটে যাবে। কেননা, এই প্রিয় স্বজনগুলোকে তার ভালো লাগে এবং তারা পরিচিত জন। তাছাড়া তাদের জমানো কিছু প্রাইজবন্ড এবং কিছু সহায়-সম্পত্তিও তো থাকতে পারে। কেউ নিশ্চয়ই এমন চান না যে তার কোন আত্মীয় নিজের সহায়-সম্পত্তি সব পোষা কুকুর­ নিজামীর নামে উইল করে দিয়ে যাবে। আপনি হয়তো ভাবছেন এরকম চিন্তা­ভাবনা মানবতাহীন এবং হিসাবী মনের পরিচয় দেয়। কিন্তু মকরের কাছে এটাই বাস্তবতা। মকরের দরজায় সুযোগ একবার কড়া নাড়লেই যথেষ্ট। সে প্রথমবারেই সেটা শুনে ফেলবে। বস্তুত, সে দরজার দিকে ঝুঁকেই থাকে, কান পেতে থাকে আর অপেক্ষা করে।



আশঙ্কা আছে যে শৈশবে মকররা অন্যান্য শিশুদের তুলনায় দুর্বল ও ক্ষীণকায় হবে। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শক্তি দুটোই বাড়তে থাকে। মকরসুলভ ভদ্র, শালীন এবং ঠাণ্ডা মেজাজ তাদেরকে এতো বেশি সহ্য-ক্ষমতা এবং বেঁচে থাকার শক্তি দান করে যে, অস্বাভাবিক নয় তাদের কেউ কেউ পৃথিবীর বুকে একশ’ বছর অনায়েসে পার করে দেবে। শনি-শাসিত মানুষগুলো অনায়েসে ডাক্তার এবং হাসপাতাল এড়িয়ে চলতে পারে। কিন্তু তারা সেটা হতে দেয় না। কেননা ভয়, অনিশ্চয়তা, দু:শ্চিন্তা এবং বিষণíতা জীবাণুর থেকেও মারাত্মক। সুষম খাদ্যের ব্যাপারে, স্বভাবের ব্যাপারে এবং রোগবালাই প্রতিরোধে যতই সতর্কতা মেনে চলা হোক না কেন; সেটা নেতিবাচকতার মারাত্মক বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হবে। যেসব মকর রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে চান তাদের উচিত বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করা। নিজেদের মধ্যে একটি ইতিবাচক বহির্মূখি মানসিকতা গড়ে তোলা। গ্রামের সজীব বাতাস সহ্য করার মতো সজীব মানসিকতা তার স্বাস্খ্যের উপর যাদুর মতো কাজ করবে। মকর জাতক এবং জাতিকাদের অধিকাংশেরই ত্বক হয় খুব সংবেদনশীল। স্নায়বিক চাপের দরুন সৃষ্ট ফুটি ফুটি, এ্যালার্জি, চামড়া ওঠা এবং ত্বকের রুক্ষতা, ঘামের অস্বাভাবিকতা, এ্যাকনি এবং বড় লোমকূপের সমস্যায় তাদের ভুগতে হতে পারে। তাদের শরীরের সঙ্গে মানানসই নয় এমন খাবার গ্রহণে এবং মানসিক চাপের ফলে তাদের পরিপাকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাঁটুর জোড়ায়, অস্খি-সন্ধি এবং অস্খিগুলো তাদের দুর্বল স্খান। মানসিক স্খবিরতা (পক্ষাঘাতগ্রস্ততা), প্রচণ্ড মাথাব্যথা এবং কিডনির ইনফেকশান তাদের বিষণíতার আরও কিছু ফল হয়ে দেখা দিতে পারে।

2 comments:

  1. অসাধারন লিখেছেন। খুবই ভালো লাগলো!!!

    ReplyDelete
  2. সত্যি আসাধারণ ......

    ReplyDelete