Monday, June 4, 2012

ধনু (২৩ নভেম্বর - ২১ ডিসেম্বর) : সাধারন বৈশিষ্ট্য

কীভাবে চিনবেন

আমার বলা উচিত যে এই রাশির উদাহরণ দেখানোটা একটা কাটা গাছ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঠেলবার মতোই সহজ তবে একথা সত্য নয়। এটা বরং গাছ ঠেলবার থেকে অনেক বেশি সহজ।


যেকোন পার্টিতে যান, এবং সেখানে সবচে প্রাণবন্ত দলটিকে লক্ষ্য করুন। হাসি খুশি এবং আনন্দে আপ্লুত যে মানুষটি ওখানে বসে আছে তাকে দেখতে পাচ্ছেন? সে একজন ধনু এবং সে একটু আগেই এমন একটি কথা বলেছে যে সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কী ঘটেছে তা সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। যখন সে তার বক্তব্য নিয়ে ঘটিত স্তব্ধতার কারণ অনুধাবন করতে পারবে তখন অবশ্য তাকে কিছুটা হতভম্ব মনে হবে - এবং দলটিতে তার চারপাশের মানুষগুলোকে দেখে মনে হবে যেন তারা এক একটি ডেগার।



ধনু আপনার দিকে এগিয়ে আসবে, এবং আপনর পিঠে আন্তরিক একটা চাপড় দিয়ে একটা গাল প্রসারিত করে হাসি দেবে। তারপর সে আপনাকে এইরকম একটি মন্তব্য দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে, “তুমি এতোটা বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও কীকরে এতোটা তরুণ সেজে এসেছো?” কিংবা “ধরো, তোমার এই কচ্ছপের গলা সোয়েটারটায় তোমাকে চমৎকার মানিয়েছে। এই ধরনের জিনিসই তোমার সবসময় পড়া উচিত। এগুলো তোমার গলায় বয়সের ভাঁজগুলো ঢেকে রাখে।” এই ধরনের উৎফুল্ল বক্তব্য দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে তখনও সে তার ঝলমলে হাসিটি ধরে রেখেছে, কিন্তু আপনার হাসিটা হয়তো খানিকটা দমে যেতে শুরু করেছে। আপনাকে সে কী এমন বলেছে যেটা আপনাকে এমনভাবে গুটিয়ে দিলো সেটা অনুধাবন করতে তার কিছুটা সময় লাগবে। এবং তার চেয়েও বেশি সময় লাগবে সে কথায় আপনার আহত হবার কী আছে সেটা বুঝতে। এরপর সে হয়তো আপনাকে ব্যাখ্যা করতে উদ্যত হবে। নিজের মেজাজ ঠাণ্ডা রাখুন। পরিস্খিতি আরও খারাপ হতে পারে।



আহা - আপনি কি বোঝেন নি সে কী বোঝাতে চেয়েছে? সে বোঝাতে চেয়েছে যে, আপনাকে দেখাচ্ছে ২৫ বছর বয়সী যদিও আপনার বয়স আসলে ৩৮ (এবং সেটা আপনার প্রকৃত বয়সের থেকে নিদেন পক্ষে ছয় বছর বেশি)। আর আপনার গলায় বয়সের যে রেখা, সেটা তো ৩৮ বছর বয়স্ক অনেক মানুষের গলাতেই থাকে, তাই না? আপনি শুধু একটা সময়েই সেটা লক্ষ্য করতে পারবেন, যখন আপনি আশে পাশে তাকাবেন। অর্থাৎ আপনি যখন আপনার ঘার ঘুরিয়ে ডানে বামে তাকাবেন তখন। তার কাছে ছবি সহকারে কোন প্রমাণ নেই সেটাই তার দোষ।



যখন নিজের অসাবধান বক্তব্যের ব্যাখ্যাগুলো দিয়ে সে আপনার আহত অনুভূতিটাকে কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করবে, তখন সে আবার আনন্দচিত্তে নতুন নাটকের সুরে শিষ তুলে অন্য দিকে রওনা হবে। এরপর আপনি যখন তাকে এই প্রসঙ্গ নিয়ে জেঁকে ধরবেন তখন সে বিস্মিত হবে এবং মর্মাহত হবে। তার উপর রাগ করা কিংবা তার কথায় লজ্জিত হওয়া অর্থহীন। ধনুদের মধ্যে জটিলতা কিংবা ক্ষুদ্রতার ছিটে ফোটা মাত্র নেই। সে নিষ্কলুষভাবে তার কষ্টদায়ক কথাগুলো বলে ফেলে।


সে যে কাটা ঘায়ে নুনের ছেটা দিতেও ছাড়ে না, সেটা আসলে ঘা সারাতে গিয়েও তার অদক্ষতাই তুলে ধরে। তাকে এতো রুক্ষভাবে বিচার করবেন না। তার কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই।এমন নয় যে আপনার কিংবা আমার সহানুভূতি তার প্রয়োজন... উন্মাতাল চাল-চলন, ধূর্ততা এবং বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় তাকে সরাসরি বিজয়ীদের সারিতে নিয়ে আসে। যেটা আপনাকে পেয়ে বসে সেটা হলো ধনুরা তাদের আনাড়ি বক্তব্যটাও ভুলে বসে থাকে। তারা মনে করে যে, পৃথিবীতে তারাই সবচে বেশি কুটনৈতিক বা কুশলী মানুষ। তারা সবসময়ই বলবে যে, “নাহ, আমি কোন কারণেই অন্য কারো মনে কষ্ট দিই না। আমি এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক। বস্তুত, তারা যা কিছু করে সবই সততার সাথেই করে। ভান-ভণিতা সবসময় তাদের চরম অপছন্দের বিষয়।



তাদের শারীরিক গঠনটা জেনে নেয়া কোন কঠিন কাজ নয়। যথেষ্ট বড় ও সুন্দর আকৃতির একটা মস্তিষ্ক এবং উঁচু ও চওড়া কপাল বিশিষ্ট একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করুন। তার আচরণে থাকবে উৎফুল্লতা, এবং বন্ধুভাবাপন্ন, নিজের মনোভাব অন্যের সাথে আলোচনায় আগ্রহী হবে এবং তার চলন বা গতি হবে দ্রুত (যদিও মাঝে মাঝে কাউকে পাবেন যে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ধীরে চলা ফেরা করে।) কোন অভিব্যক্তির শরীরিক প্রতিফলনটা তাদের ক্ষেত্রে সাধারণত নাটকীয় বা শক্তিশালী হয়ে থাকে, কিন্তু সেটার ফলাফল আনন্দদায়ক হয় না। একটা বক্তব্যের যথার্থতা উদ্দেশ্য করতে গিয়ে ধনু হয়তো তার হাতটাকে নাড়িয়ে বোঝাতে উদ্যত হলো, আর অমনি কেচাপ-এর বোতলটা ঠাস করে মাটিতে পড়ে ফেটে চৌচির। সে মাথা উঁচু করে সমুখে দ্রুত হেটে যাচ্ছে আর অমনি একটা পাথরে পা লেগে হোচট খেয়ে পড়বে। একই সময়ে তার ব্রিফ কেইসটা ঝট করে খুলে গিয়ে ভেতরের যাবতীয় কাগজ পত্র রাস্তায় ছড়িয়ে একাকার।



জুপিটার নিয়ন্ত্রিত মানুষগুলোর দৃষ্টি চড়ুই এর দৃষ্টিশক্তির মতোই প্রখর এবং উজ্জ্বল এবং এগুলো পিটপিট করে ওঠে সজীব আর প্রাণবন্ত যতো রসিকতায়। ধনুরা হয় হবে খুবই লম্বা আর নয়তো সাধারণের থেকে খাটো এবং এদের শরীর হবে পেটা এবং শক্ত। লম্বা ধনুরা আপনাকে একই শক্তিশালী ঘোড়া বা উদ্দীপনাময় কোল্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। অনেক ধনুর কৈশোরেই তাদের কপালের উপর ঘোড়ার কেশর যেমন ঝুলে থাকে তেমনি একগোছা চুল ঝুলে থাকে। তারা এই চুলগুলোকে মাথা ঝাকিয়ে কিংবা আলতো হাতের স্পর্শে সরিয়ে দেবে - তাদের এই অভ্যাসটা সহজে যায় না - যতদিন না বড় হয়ে তারা চুলের অন্য স্টাইল না করছে কিংবা তাদের মাথায় টাক না পড়ছে।



ধনুরা সাধারণত অস্খিরপ্রকৃতির। তারা এক জায়গায় স্খির হয়ে দাঁড়াতে বা বসতে ঘৃণাবোধ করে। ধনুরা অপ্রতাশিতভাবে শারীরিক আকর্ষণীয়তার অধিকারী। এবং তাদের আকর্ষণের মূল হেতুটা হয়তো তাদের গতানুগতিক আচরণ এবং জীবন যাপনের বিরুদ্ধে তার অশ্রদ্ধা এবং স্পষ্ট আত্মবিশ্বাস। সে এমনভাবে হাঁটে যে মনে হয় সে সত্যিই কোথাও যাচ্ছে। তার চলনে কোন থেমে দাঁড়ানো নেই কিংবা দ্বিধাও নেই। (মনে রাখবেন জন্মকুষ্ঠিতে একটা বিপরীত প্রভাব থাকলে এই চলনের গতি ধীর হতে পারে।)


নিউ ইয়র্কের একটি প্রকাশনা শিল্পে একজন মহিলা কাজ করতেন, যার সম্পর্কেও অনুরূপ উক্তি করা হতো, “যদি সত্য শুনতে চাও তাহলে কেই এর কাছে যাও - তবে সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে।” কেই শুধু যে একজন খাঁটি ধনু ছিলেন তাই নয়, বরং তার জন্মকুষ্ঠিতে ধনুর অতিরিক্ত প্রভাব ছিলো। সুতরাং তাকে জুপিটার নারী প্লাস বলে উপাধি দিলে বেশি বলা হবে না। রাশি অনুযায়ীই সে উষä ও মহৎ এবং তার অনেক বিশ্বস্ত বন্ধু রয়েছে যারা তাকে ভালোবাসে, এবং এটাও রাশির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই বটে। তাদের বিশ্বস্ত না হয়েও উপায় নেই, এবং তাকে ভালো না বেসেই বা কী করবে যদি তিন বছর আগে যে ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করেছে সেটা এই কেই করে থাকে। কেই নামের এই মহিলা হৃদয় খুলে তার সেক্রেটারির জন্যে শীতের পোশাক কিনে দিয়েছিলো। অল্প বয়সী মেয়েটির দিন খুবই খারাপ যাচ্ছিল, কেননা তার কিছুদিন আগেই তাকে একটা অর্থনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়তে হয়। তার অবস্খা এতোটাই করুণ হয়ে উঠেছিল যে কান্নাকাটি করা ছাড়া আর কোন গতি ছিলো না। অন্যেরা তাকে সমবেদনা জানিয়েছে, কিন্তু কেই এর আগে আর কেউই তাকে সাহায্য করার জন্যে কোন হাত বাড়ায় নি। এটা বরং ধনুর কাছেই ছেড়ে দেয়া ভালো। (এ কথার আপনি যে অর্থই করুন না কেন।)



হেমন্তের এক সুন্দর দিনে, তাদের দুজন নারীদের সম্মিলিত সহযোগিতায় ফিফথ এ্যাভিনিউর স্যাক শপিং মলে যায়। লিফ্ট-এ উঠবার আগে পর্যন্ত দরিদ্র সেক্রেটারিটি আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছিল। হঠাৎ, ধনুটি তার দিকে দীর্ঘক্ষণ প্রশংসাব্যঞ্জক একটা দৃষ্টি দিলো এবং দৃঢ়ভাবে এবং উচ্চ স্বরে বললো, “আমরা বরং প্রথমে ফ্যাট গার্লস ডিপার্টমেন্টে খোঁজ করি।”



চরম উৎফুল্লতা হঠাৎ করেই যেন তীব্র ব্যথায় কুঞ্চিত হয়ে গেলো। সেক্রেটারিটির ফিয়ান্সি তাকে সবসময় বলেছে যে সে মোটা নয় বরং পেলব। কিন্তু এখন ধনুর কষ্টদায়ক কিন্তু সরল উক্তিতে সে হতভম্ব হয়ে গেল। এখনও ঐ মেয়েটির মনে আছে গাড়িতে সেদিন মানুষগুলো কীভাবে তার দিকে তাকিয়েছিল। আর সে এই ভেবে কাতর হচ্ছিল যে তার ফিয়ান্সিও কি আবার তাকে মনে মনে মোটা বলে ভাবে কি না। কিন্তু সহজ সরল কেই এই অতর্কিত বক্তব্যটাকে শুধরে নিয়েছিলেন। মেয়েটির মানসিক অস্বস্তি দেখে, সে তাড়াহুড়ো করে একটা কৌতুক বলে, “আর আমরা যদি এখানে তোমার ফিট হবে এমন কিছু না পাই তাহলে আমাদেরতো অন্তত ক্যাম্পিং করার তাবুর কাপড় রয়েছেই।” ধনু তার নিজের মজার বক্তব্যে হো হো করে হেসে উঠলো, এবং হেসে উঠলেন লিফ্ট-এর অন্যান্য সহযাত্রীরাও।



সেক্রেটারির সাথে কেই -এর উষä ও মহৎ সফরটির কিছুদিন পরেই সে তার বস্, অর্থাৎ স্বয়ং সম্পাদক সাহেবকে উজ্জীবিত করার জন্যে যাত্রা করে। সম্পাদক সাহেব তার ডাক্তারের নির্দেশে এক বছর মদ পানে বিরতি দেন। এক বছর মানে ৩৬৫ দিন, কোন কম বেশি নয়। তার হেপাটাইটিস রোগ হয়েছিল। মদ পানে নিষেধাজ্ঞা। পুরো বারোটি মাস ঠোঁট ভেজাবার মতো সামান্য মদও তিনি ছুঁয়ে দেখেননি, ফলত তিনি নিজের ইচ্ছাশক্তি নিয়ে বেশ গর্বিত হয়ে উঠেছিলেন।


ইউরোপ সফর থেকে ফিরে এসে কেই তাকে ধনুসুলভ একটি সজীব শুভেচ্ছা উক্তি উপহার দিলো, “আপনার মদ পান সম্পর্কে,” সে শুরু করলো, “আমি শুনেছি আপনি নাকি মদ ছেড়ে দেবার চেষ্টা করছেন।” চেষ্টা? ১২ মাস একটা বিন্দু স্পর্শ না করার পর এই শুনতে হলো? চেষ্টা? সে ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতেই কেই তার বক্তব্য পুনরায় চালিয়ে গেলো। “ধরুন জো-এর বই প্রকাশ হবার কারণে আগামীকাল রাতে একটা পার্টি হবে। আমি ভেবেছিলাম আপনাকে সাবধান করে দেবো, কিন্তু একা আপনাকে পাইনি বলে সেটা করা হয়ে ওঠেনি।” তাকে সাবধান করা? কী ব্যাপারে? এই সরু হুমকী শুনে বেচারা সম্পাদক তার বিরক্তিটাও বিস্মৃত হলেন। সে বলে চললো: আমরা সবাই ভাবছিলাম যে আপনি যদি আমাদের পার্টিটাকে ভণ্ডুল না করেন।” ইতিমধ্যে, সম্পাদক সাহেব একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছেন, কিন্তু আমাদের ধনুর তখনও মুখ চলছে।



“আমি আসলে বলতে চাচ্ছি যে, আমরা আশা করছি আপনি একটা ভেজা কাঁথার মতো পান করবেন না। এই গোঁ ধরে থেকে আমাদের সন্ধ্যাটা বরবাদ করবেন না - এই আর কি। জো মারটিনি পছন্দ করে, আর তাছাড়া তার বই এবার সাহিত্য বোদ্ধাদের তালিকায় স্খান পেয়েছে। আপনি যদি এই বাজে অসুখটার কারণে পলাতক আসামীর মতো ঘরময় আপনার নিষেধাজ্ঞা মনে রেখে ঘুরে বেড়ান তাহলে পুরো পার্টিটা স্যাতস্যাতে হয়ে উঠবে। বলুন, অন্যরা একই রুমে থেকে আপনার এই অবস্খা দেখলে কি তারা স্বস্তি পাবে?



সম্পাদক সাহেব কোনভাবে নিজের মুখ আটকে রেখেছিলেন, যে কারণে বেচারি নিরাপদেই ছিলো। অবশ্য এরপর তিনি তার আহত অহংকারকে পুনরুদ্ধার করে কেই কে মনে করিয়ে দেন যে এডনা ফার্বার, আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ের মতো লেখকদের সন্মাননায় তিনি নিজেই হোস্ট হয়ে পার্টির আয়োজন করেছেন। এবং সেখানে কোন দুর্ঘটনাও ঘটেনি। “আমি সবসময়ই শুনে এসেছি,” তিনি দাঁত কিরমিরিয়ে শুরু করলেন,  “আমার আচরণ একদম শুদ্ধ।” ক্রোধে উন্মত্তপ্রায় বসের মানসিক অবস্খা একদমই না বুঝে ধনুটি আন্তরিকভাবেই তার কথায় একমত পোষণ করলো। “সেটা নিশ্চিত। আপনি চমৎকার একজন অতিথিপরায়ণ মানুষ। সম্পাদনা ব্যাবসায় কেউই এটা বুঝতে পারে না.” সম্পাদক সাহেবের ধৈর্যের যে উচ্ছিষ্টাংশ ছিল সেটা জড়ো করে প্রশ্ন করলেন, কি বুঝতে পারে না? ধনুর উত্তরটি ঘরটাকে উত্তপ্ত করে তুললো। “এটা কীভাবে সম্ভব যে এতো অতিথিপরায়ণ ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও অতিথি হিসেবে আপনি এতোটাই খাপছাড়া? আপনার নিজের আয়োজিত পার্টিগুলো এতো চমৎকার হয়, অথচ আপনি অতিথি হয়ে যে পার্টিতে যান সেটাতে সবকিছু ওলোট পালোট করে ফেলেন। এটা সত্যিই বোঝা মুশকিল।”



এরপর কেই অন্যকিছু একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলো। তার বসের চেহারাটা। এটা যেন লালচে হয়ে উঠছিলো। হঠাৎই নিজের ভুল বুঝতে পেরে, বন্ধুভাবাপন্ন ধনুটি সাথে সাথেই ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বললো, “তওবা, আশা করছি আপনাকে কষ্ট দেবার মতো কিছু বলিনি। আপনার ব্যবহার বা আচরণ কেমন সেটাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না। জো মনে করে যে আপনি সত্যিই চমৎকার।

জো আজ আমাদের জানিয়েছে যে সে আমাদের এখানে আসতে চায়, যদিও তার পূর্ববর্তী সম্পাদক এটা চাননা মোটেও। জো বুঝতেই পারছে না যে আপনার সম্পর্কে এই সব বেখাপ্পা কথাগুলো কারা বলে। আমি তাকে বলেছি, মানুষ আসলে আপনার ব্যাপারে ঈর্ষাকাতর। আপনাকে তো আর আগের মতো উজ্জীবিত মনে হচ্ছে না। আপনি কি নিশ্চিত আপনার ডাক্তার যা করছে বুঝে শুনে করছে? (কথিত আছে যে, কেই এর বস্ সেদিনই আবার মদ পান শুরু করেছিল, এবং আর ছাড়েনি)। ধনুটির কী হলো? সে এই একই প্রকাশনায় নতুন লেখকদেরকে নার্ভাসনেস কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেই চলেছে। বহিষ্কার? তার বসের এই সাহস হবে না যে তাকে চাকুরিচ্যুত করবে। যেমনটি আমি শুরুতেই বলেছি সবাই তাকে ভালোবাসে।



অল্পকিছু মানুষই ধনুর উপর বেশি সময় ধরে বিরক্ত হয়ে থাকতে পারে। কেননা এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে তাদের মধ্যে কোন ক্ষতিকর উদ্দেশ্য একদমই নেই। এই পূজনীয়, পছন্দনীয়, বুদ্ধিমান আদর্শবাদীকে আপনি যেকোন সময় যেকোন খানেই পেতে পারেন। কোন এক রবিবার রাতে টিভি পর্দায় কোন সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে তাকে হয়তো তার বেপরোয়া তীরগুলো ছুড়তে দেখবেন। এদিকে তার নিমন্ত্রিত অতিথি তারকারা সবাই তার খোলাখুলি কথাবার্তায় বাকরুদ্ধ, স্তব্ধ এবং হতবাক হয়ে তার পাশে বসে থাকবে। কোন এক সোমবার সকালে তাকে হয়তো আপনার ক্যাব ড্রাইভার হিসেবে পাবেন, যে আনন্দের সাথে আপনাকে ব্যাখ্যা করবে বখশিশ কম দেয়া প্যাসেঞ্জার কেন তার সহ্য হয় না। কিংবা কোন এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে হয়তো কোন একটা রেস্টুরেন্ট-এ খাবার পরিবেশন করতে দেখবেন যে আপনাকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছে ওয়েস্টার অর্ডার না দেবার জন্যে, কেননা সেগুলো হয়তো অতো ফেন্সশ নয়।



অধিকাংশ ধনুই আন্তরিকভাবে চায় যে আপনি প্রাণবন্ত হয়ে উঠুন। অন্তত, এটাই তারা করতে চেষ্টা করে। কিন্তু নিজের সদিচ্ছাকে ফলাতে গিয়ে প্রায়ই তারা অঘটন ঘটিয়ে বসে। আমার একজন ধনু ম্যানেজার ছিলেন। একবার আমার মনটা তেমন ভালো নেই। তখন ভদ্রলোক আমার মনকে চাঙ্গা করার জন্যে বললেন আমার চুলগুলো নাকি আগের থেকে অনেক সুন্দর লাগছে। অথচ তার আগে অন্তত এক সপ্তাহ আমি আমার চুল ধুই নি তো বটেই, এমনকি সেদিন আমি চুলটা আঁচড়ে বেধেও আসিনি। কিছু কিছু সময় ধনুরা এমন সব কথা বলে বসে যে আপনাকে প্রাণবন্ত করার পরিবর্তে বরং আরও বিরক্ত করে তোলে। তারা আপনাকে বেশ বিচক্ষণ পরামর্শ দিতে পারে, অবশ্য যদি তার পরামর্শগুলো বিবেচনা করার মতো আপনার সময় থাকে। এটা একটা অগ্নিবোধক রাশি। তাই অধিকাংশ ধনুই বহির্মুখী মানসিকতার অধিকারী, তারা বেশি কথা বলে এবং অগ্রগামী। কিছু ধনু আছে যারা কষ্টদায়কভাবে লাজুক, শান্ত, কিন্তু তারাও অনেক মৌলিক চিন্তার অধিকারী ­ এবং তারাও সমানভাবেই লাগামহীন মুখের অধিকারী। বস্তুত, শান্ত এবং রহস্যময় ধনু যারা আত্মকেন্দ্রিক, এবং বিনয়ীভাবে চলাচল করে তারাও বড় স্বপ্ন দেখে অভ্যস্ত এবং তাদের লক্ষ্যটাও থাকে খুব উঁচুতে।


বহির্মুখীই হোক কিংবা আত্মকেন্দ্রিক, ধনুরা সবসময়ই হৃদয়কে উদ্দীপ্ত করতে পছন্দ করে। সেই সব দুর্লভ কিছু ধনু যারা তেমন একটা কথা বার্তা বলে না, তারা হয়তো মনে মনে এমন চমৎকার কোন পরিকল্পনা করছে যেটা বিশ্বকে চমকে দিতে পারে। তার জিহ্বা যখন স্খির তখন তার মস্তিষ্ক আরও ব্যস্ত। আর এই রাশির প্রভাব পুরোটাই অজ্ঞাতে তার স্বভাবের মধ্যে রয়ে গেছে। ফলত তার নির্বাক থাকাটা বরং তার পরবর্তী চমকপ্রদ পদক্ষেপ দিয়ে আপনাকে অপ্রস্তুত অবস্খায় চমকে দেয়ার উদ্দেশ্যেই।



অধিকাংশ সময়েই, একজন সাধারণ ধনু জাতক সুখী এবং মিশুক। কিন্তু তার মেজাজ হঠাৎ করেই আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে যদি তার স্বভাবসুলভ বন্ধুভাবাপন্নতাকে কেউ বিদ্রূপ করে, কিংবা কেউ তার খুব বেশি নিকটবর্তী হবার চেষ্টা করে। কর্তৃপক্ষ এবং তথাকথিত সমাজ ব্যবস্খার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়াটা ধনুদের স্বভাবের অংশ। ধনুরা রণক্ষেত্র (সেটা যে রণক্ষেত্রই হোক না কেন) থেকে পালাবার পাত্রটি নয়। এমনকি সাহায্যের জন্যেও তাদেরকে আহাজারী করতে দেখা যায় না। ধনু নারীরা তাদের মেজাজের স্খিরতা হারিয়ে ফেলে। এবং সাধাসিধে ভাষায় এমন সব কথা বলে যে, ঝামেলা করতে আসা মানুষগুলো তাদের অবস্খানে ফিরে চলে যায়। পুরুষেরা তাদের মুষ্ঠিবদ্ধ হাত এবং নিজেদের বীতশ্রদ্ধতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। রুক্ষ এবং অপমানকারী ব্যক্তিটি রাস্তার পাশে মুখ থুবড়ে চিৎপাট অবস্খায় নিজেকে আবিষ্কার করে, এবং ভেবে হতবাক হয়ে পড়ে যে ট্রাকটা এলো কোথেকে।



প্রাণোদ্দীপনায় মুখর বৃহস্পতি শাসিত মানুষগুলো নিজেদের বিরুদ্ধে অসততার অপবাদ সহ্য করতে পারে না। তার সততা এবং সাধুতার বিরুদ্ধে কেউ অবিবেচকের মতো মন্তব্য করলে কিংবা অপবাদ দিলে মর্যাদাহানীর রাগে তার মেজাজ খুব চড়ে যায়। কিন্তু মেজাজ ঠাণ্ডা হবার পর তার মধ্যে অনুতাপ আসে এবং সে ক্ষতি পূরণ করতে চেষ্টা করে। সে আপনার চোখদুটো কালো করে দেবে, ফলত আপনাকে হসপিটালে আশ্রয় নিতে হবে। কিন্তু সম্ভবত পরবর্তী দিন ঠিকই তার পক্ষ থেকে আপনার জন্যে ফুল এবং সহানুভূতির অভাব থাকবে না। ধনুরা আগে তাদের বক্তব্য বলে এবং যা করার সেটা করে, সেগুলোর পরিণতি নিয়ে তাদের ভাবনাটা আসে পরে।



অনেক ধনুই মঞ্চের প্রতি আকৃষ্ট, এবং উৎফুল্ল শ্রোতাদের জন্যে একটার পর একটা বোনাস সঙ্গীত পরিবেশনে তাদের সমতুল্য আর কেউ নেই। উপস্খাপনার চরম আনন্দে সে ভাঙা গলাতেও গান শোনাবে এবং নাচতে নাচতে তার জুতোও খুলে যাবে। এ কারণে শো-বিজনেস ধনু দিয়ে ভরা।



বৃহস্পতি শাসিত পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে প্রচণ্ড ধর্মীয় মনোভাব দেখা যায়, বিশেষত তাদের তরুণ বয়সে। ধর্মীয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় তাদের তীব্র আগ্রহ থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা ধর্মীয় মতবাদের প্রতি শ্রদ্ধাহীন হয়ে ওঠে। পূববর্তী বিশ্বাসের ভিত্তিগুলোর ব্যাপারে তাদের মনে প্রশ্ন জেগে ওঠে এবং মূল্যবোধের বিশুদ্ধতার খোঁজ করতে থাকে। এমন ধনু খুঁজে পাওয়া মুশকিল যার সহজে বহনযোগ্য কোন লাগেজ নেই। তারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসে, এবং তাদের অন্ততপক্ষে একটা স্যুটকেইস তো থাকবেই - যেটার জরাজীর্ণ অবস্খা অন্তত শতটি ভ্রমণের সাক্ষী হয়ে আছে। সেটাও হয়তো হঠাৎ ভ্রমণের জন্যে গোছগাছ করে রাখা হয়েছে।


সরল, সাহসী, এবং আশাবাদী ধনুদের মধ্যেও এক ধরনের ছেলেমানুষি লক্ষ্য করা যায়। তাদের মধ্যে জীবনের জটিলতা উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা যায়। তবে তাদের মধ্যে কিছু কিছুকে আবার পরবর্তী বয়সে প্রশংসনীয় বিচক্ষণতার সাথে সংসার জীবনে সার্থক হতেও দেখা যায়। কিন্তু এ সত্ত্বেও যখন সংসারটা তাদের স্বাধীনতায় বোঝা হয়ে ওঠে তখন তারা সত্যিকার অর্থে সুখী হয়ে উঠতে পারে না। বৃহস্পতি শাসিত স্বভাবই হলো বন্দিত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, এবং খুব বেশি বন্দিত্ববোধ তাদেরকে খুব কঠিন কোন রোগে আক্রান্ত করতে পারে। কিন্তু এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে তার অবশিষ্ট যে প্রাণশক্তি থাকবে সেটা দিয়েও সে ম্যাথুসেলা (বাইবেলে বর্ণিত সেই বয়স্কতম মানুষ যিনি ৯৬৯ বছর বেঁচে ছিলেন) -র মতো অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারবে। অধিকাংশ ধনুই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সচেতন এবং শক্ত সমর্থভাবে বেঁচে থাকে। বয়সের দরুন চিন্তা চেতনার সমস্যায় তারা কখনই পড়ে না বললে চলে।



নিতম্ব, ফুসফুস, যকৃত, বাহু, হাত, কাঁধ, পরিপাকতন্ত্র এবং পা ইত্যাদি অংশগুলো ধনুদের অসুস্খতার জন্যে বেশি বিপদজনক। খেলাধুলার প্রতি অনুরাগ এবং বেপরোয়াভাব তাদেরকে দুর্ঘটনায় পতিত করতে পারে। হসপিটালের ক্ষমতা নেই তাকে অল্প কয়েকদিনের বেশি বিছানায় শুইয়ে রাখতে পারবে। স্বেচ্ছায় সে অসুস্খতার কাছে নিজেকে সমর্পন করে না, তাই সাধারণত বিস্ময়করভাবে দ্রুত সে সেরে ওঠে। তারা বিশ্বাস করে যে আগামীকালটা গতকালের থেকে নিশ্চিতভাবে সুন্দর হবে, এবং আজকের দিনটাও বেশ চমৎকার। মেঘ এসে সূর্যকে ঢাকার আগেই বিষণíতা তার মন থেকে সরে যায়। জন্মকুষ্ঠিতে রক্ষণশীল কিংবা সতর্কতার কোন প্রভাব না থাকলে প্রতিটি ধনুর মধ্যেই জুয়ার প্রতি আকর্ষণ থাকে। তাদের মধ্যে অল্পকিছু সংখ্যকই কেবল জুয়ার টেবিল থেকে মুখ সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়। ডিলারের হাতে ডাইসের ঘুরপাক খাওয়া কিছু কিছু ধনু পুরুষ এবং নারীকে সাইয়ারস-এর সাইরেন সঙ্গীতের মতোই মোহাবিষ্ট করে তোলে। গ্রহদের মধ্যকার ক্ষতিকর প্রভাব থাকলে, কিছু কিছু ধনু নিজেদের সৌভাগ্যকে ছুড়ে ফেলতে পারে জুয়ার টেবিলে, কিংবা বাড়িভাড়ার টাকাটা পছন্দের ঘোড়ার নাকে ঝুলিয়ে দিতেও দেরি করে না। জুয়ার আসর ধনুদেরকে তেমনিভাবে আকর্ষণ করে যেমনিভাবে মধু, মাছিকে আকর্ষণ করে। একইভাবে তাদেরকে আকর্ষণ করে আরও গাম্ভীর্যপূর্ণ জুয়া যেমন স্টক মার্কেট এবং রিয়েল এ্যাস্টেট। সৌভাগ্যবশত তাদের অধিকাংশই অধিক প্রত্যাশাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু তারপরও তারা জুয়া কিংবা লটারির টিকেটের পেছনে যখন তখন ভালো অংকের টাকাই লাগিয়ে দেয়।



লাজুক এবং বহির্মুখী দুই প্রকৃতির ধনুই প্রণয়ে জড়াবার ক্ষেত্রে যখন তখন সুযোগ নিতে পারে। ধনুরা যেকোন সময়ে প্রণয়ের জালে সবকিছু ভুলে বেপরোয়ভাবে নিজেকে ধরা দিতে পারে। কিন্তু বিয়ের কথা শুনলেই যেন তাদের প্রণয়াবেগে হঠাৎ ভাটা পড়ে যায়। তারা ভাবে যে প্রণয়ের পালা শেষ, এবং তারপর সতর্কভাবে বিবেচনার পর অগ্রসর হয়েই তারা ভুলটা করে বসে। যদিও ভালোবাসার বন্ধনে তারা বেশ উষä এবং চমৎকার, কিন্তু তাকে বাধনে আবদ্ধ করাটা কৌশলের ব্যাপার। প্রতীকীভাবে সে অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক ঘোড়া - যেটা তাকে যে কোন দৌড় প্রতিযোগিতায় অগ্রগামীর সারিতে রাখে, যদি না সে নিজেই হোচট খেয়ে পড়ে।


কিছু কিছু ধনুদের আচরণ বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সবচে অপ্রীতিকর যেগুলো, যেমন, তাদের হঠাৎ করে বদমেজাজী হয়ে ওঠা, খাদ্য এবং পানীয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। ফলত তাদের মধ্যে মোটা হয়ে যাবার, মদ পানের প্রতি ঝুঁকে পড়বার লক্ষণ দেখা দেয়। তাদের কষ্টদায়ক বক্তব্য, তীব্র উদ্ভট আচরণ এবং কোন কিছু গোপন রাখবার অক্ষমতা তাদের প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন মস্তিষ্ককে কলঙ্কিত করে তোলে। কিন্তু এসবের কোনটাই তাদের চিরস্খায়ী দোষ হিসেবে থেকে যাবে এমন নয়। ধনুসুলভ প্রতিজ্ঞা দিয়ে সহজেই এগুলোকে স্বভাব থেকে দূর করা সম্ভব। সাধারণ একজন বৃহস্পতি শাসিত মানুষ আপনাকে টাকা ধার দেবে, কিন্তু সেই টাকা ফেরত চেয়ে আপনাকে কখনও কুণ্ঠিত করবে না। এমনকি তার আপনাকে সেই টাকা ফেরত দেবার ব্যাপারে কোন বাধ্য বাধকতার মধ্যেও ফেলবে না (অবশ্য যদি না তার উপর কৃপণ চন্দ্রের প্রভাব থাকে।) একজন জুপিটার নিয়ন্ত্রিত গৃহিনী গৃহহীন এতিমকে কিংবা ঘরহারা পশু-পাখি লালন পালন করার ভার নেবে। আর তার খাবার টেবিলে সবসময়ই আরও মানুষের অংশগ্রহণের জায়গা থাকবে।



ধনুদের মধ্যে হঠাৎ করে কোন নতুন বিষয়ে কথা বলার বাতিক লক্ষ্য করা যায়। যেকোন মহৎ উদ্যোগেই অন্ধ ত্যাগ স্বীকার করতে এরা প্রস্তুত। এবং সেক্ষেত্রে সে সবসময় উদ্যোগের বাধাবিঘíগুলোর থেকে সফলতার সম্ভাবনাই তার কাছে বেশি মনে হয়। এটা তার বিচিত্র কল্পনাশক্তি এবং প্র্রগতিশীল চিন্তাভাবনার বহি:প্রকাশ। নিজের পরিস্খিতি খুবই শান্তভাবে, যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে কখনই সে ব্যর্থ হয় না। অনেকসময় প্রতিপক্ষকে তীক্ষî বিদ্রূপের মাধ্যমে আঘাত করেও বিরক্তি কিংবা বিরক্তিজনিত ঝগড়া থেকে কোন না কোনভাবে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে। তার ভেতরের ক্রোধ সবসময়ই তেতে উঠবার জন্যে প্রস্তুত, অবশ্য যদি কেউ অনুচিতভাবে তার অসম্ভব স্বপ্ন কিংবা বিশেষ কোন মুহূর্তের দাবিকে আঘাত করে তবে। তার তীরগুলো তখন লক্ষ্য ভুল করে না। সেগুলো চাতুর্য, ধূর্ততা এবং তীক্ষîতার সমন্বয়ে এতই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে সবচে শক্ত বর্মটাকেও গুড়িয়ে দিতে পারে।



যদিও অল্পকিছু ধনু ব্যক্তি সত্যিকার অর্থেই মজার, কিন্তু তাদের কৌতুক বলার ক্ষেত্রে একটা কৌতুহলী হবার মতো ব্যাপার রয়েছে। তাদের অধিকাংশের কৌতুক বলার সময়টা যেন খানিকটা বাজে এবং সেটা পরিস্খিতিটাকে আরও গম্ভীর করে তোলে। শ্রোতা - তা তারা ঘরেরই হোক কিংবা মঞ্চের, সবাই বিরক্তিতে চেচিয়ে উঠবে। কিন্তু আনন্দচিত্ত ধনু হৃদয় সেটাকে সবার হাস্য মনে করে নিজের কৌতুক বলার সময়জ্ঞান নিয়ে তৃপ্ত হবে। পুরো ব্যাপারটা সত্যিই কৌতুকময়।



নারী কিংবা পুরুষ, যেকোন ধনু জাতকই হঠাৎ হঠাৎ এমন আকস্মিক আচরণ করে, বা তারা কোন মনযোগ কিংবা প্রশংসা প্রত্যাশা করে না বলে ভান করে, যেন আপনার মনে হবে যে তারা তীক্ষî বুদ্ধির অধিকারী নয়, কিংবা হয়তো তারা লাজুক। ডিসেম্বরে জন্ম নেয়া এমন কিছু ব্যক্তি আছে যারা মাঝে মাঝে অদ্ভুতভাবে একাকী থাকার আচরণ প্রদর্শন করে। তবে এটা তার নিজের বুদ্ধিমত্তাকে আরও তীক্ষî করে তুলে প্রতিভায় রূপ দেয়ার সুযোগ করে দেয়।


যদিও ধনুদের চমৎকার স্মৃতি শক্তি রয়েছে এবং তারা ঠিক ঠিক মনে করতে পারে তারা কী বলেছে। কিংবা ১৯৩৯ সনের ১৪ এপ্রিল তারা কোথায় ছিলো। এমনকি কোন বই পড়ে বা সিনেমা দেখে সেগুলোর খুঁটি নাটি সবকিছুই তারা মনে রাখতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে নিজেদের কোটটা খুলে কোথায় রেখেছে সেটা মনে করতে না পারার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের অধিকাংশই হাতমোজা, চাবি, মানিব্যাগ প্রায়ই হারিয়ে ফেলে। কিছু নির্দয় মানুষ তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করে যে, তাদের ঘাড়ের উপর মাথাটা যদি লাগানো না থাকতো, তাহলে সেটাও তারা হারিয়ে ফেলতো।



একজন ধনু কখনই সফলভাবে মিথ্যা বলতে সক্ষম নয়। কেউই তাকে এক মিনিটের জন্যেও বিশ্বাস করে না। প্রতারণা ধনুদের স্বভাবে নেই, কিন্তু যখন তারা প্রতারণামূলক কিছু করতে যায়, তখন সহজেই সেটা প্রকাশ হয়ে পড়ে। সবসময় সত্য নিয়ে পড়ে থাকাটাই তার জন্যে সহজ। যেখানকার জল সেখানে গড়াতে দিলেই ভালো। তার মধ্যে বৃশ্চিকের প্রভাব না থাকলে তার অতি সতর্ক মনও তাকে প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে এড়াতে পারে না। নিজের অনুভূতি বা ভাব গোপনকারী একজন ধনুকে আমি চিনতাম যার উপর প্লুটোর প্রভাব ছিলো। ফলত সে বেশ ভালো দাবা খেলতে পারতো। এই ধরনের বৃহস্পতি নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি বিরল। কিন্তু প্রস্তুত থাকেন, হয়তো আপনার সাথেও এমন একজনের দেখা হতে পারে।



ধনুদের মনে জীবনটা যেন একটা সার্কাস। সে আকাশী রঙের পোশাক পরা একজন ভাঁড়, যে লাল লাল আশাগুলো নিয়ে লম্ফ ঝম্প করে বেড়াচ্ছে। তার মুখমণ্ডলে উজ্জ্বল, প্রাণবন্ত রঙের ছড়াছড়ি, তার চোখগুলো ঝিকমিক করছে কৌতূহল আর হাস্যরস দিয়ে। ক্যালিউপ যন্ত্রের সুর যখন আরও উঁচু হয়ে ওঠে তখন সে হোচট খেয়ে পড়ে যায়, এবং তারপর একটা ক্ষীপ্র ঘোড়ার উপর ডিগবাজি দিয়ে চড়ে বসে। তার পায়ের সাথে যুক্ত ঘন্টার শব্দ যেন দূরবর্তী কোন চার্চের শীর্ষের মতো মেঘের দেশে অদৃশ্য হয়ে আছে । বিচিত্র ঝলমল রঙের একটি হর্ণ দেবার যন্ত্র, যা তৈরি হয়েছে আদ্রতারোধক কোন আকর্ষণীয় ধাতু দিয়ে, সেটাকে সে নাড়াতে থাকে। হোক সে আত্মবিশ্বাসী কিংবা পশ্চাদমুখী, মহৎ এবং আদর্শবাদী এই ধনুদের সত্যিকার স্বভাব হলো খুবই হাসিখুশি এবং প্রাণবন্তভাবে জীবন যাপন করা। তার বুকের উপর সে একটা ফুল রাখে এবং নিজেকে ঝুঁকিয়ে চোখ তুলে দেয় আকাশে। যখন সে সরাসরি তার লক্ষ্যে দৃষ্টি দেয়, তখন সে এতটাই উঁচুতে তার তীর ছুড়তে পারে, যেখানে মানুষের দৃষ্টিশক্তি পৌঁছতে পারে না। সেখানে স্বপ্নগুলো সবই সত্যি হয়ে যায়।


1 comment:

  1. valo laglo pore onek kiso jante parlam. aro jante abar poron.
    by mithu.
    ...........
    ......................
    .......................................

    ReplyDelete