Saturday, June 2, 2012

কুম্ভ(২১ জানু - ১৮ ফেব্রু): সাধারন বৈশিষ্ট্য

কীভাবে চিনবেন

কুম্ভদের স্মৃতিশক্তি যে খুব প্রখর সেটা বলা যাবে না। কিন্তু তাকে সবকিছু মনে রাখতেও হয় না আবার কোন স্মৃতিচারণের প্রয়োজনও তার তেমনভাবে পরে না। সে বরং খোলা বাতাস থেকেও তার জ্ঞান অর্জন করে, এবং কোথায় জ্ঞানলাভ করা যাবে সে নির্দেশনা পাবার জন্যে তার শরীরে নিশ্চয়ই কোন অদৃশ্য এন্টেনা লাগানো আছে। কেনই বা তারা অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিজেদের মস্তিষ্ক অহেতুক বোঝাই করে তুলবে, সে তো ইচ্ছে করলেই তথ্যগুলো বয়ে যাওয়া বাতাস থেকেই কুড়িয়ে নিতে পারে। মুদির দোকান থেকে দ্রব্য-তালিকার সবচে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটিই না কিনে সে বাসায় ফিরে আসবে।

কেননা, কোনটা কিনতে হবে, কী বাদ পড়লো এ ধরনের চিন্তা করা তার কাছে বিরক্তিকর এবং অপ্রয়োজনীয়। কুম্ভের স্বভাবসম্পন্ন জাতকেরা সেই কিংবদন্তী প্রফেসরেরই একটা নমুনা মাত্র। সেই প্রফেসরটিকে আমি চিনতাম। তার স্ত্রীর সাথে একদিন দুপুরে তার আসাদগেইটের আড়ং-এ দেখা করার কথা। কিন্তু আগেভাগে পৌছে যাওয়ায় অপেক্ষারত অবস্খায় এক পুরোনো বন্ধুর সাথে তার দেখা হয়ে গেল। (কুম্ভরা সবসময়ই পুরোনো বন্ধুদের সাথে মিলিত হবার ব্যাপারে আগ্রহী। পার্বত্য চট্রগ্রামই হোক, কিংবা কেউকারাডং-এর গুহায় হোক, সব জায়গাতেই তার বন্ধুবান্ধব পাওয়া যাবে।) কুম্ভটি তখন বন্ধুর সাথে কথায় ডুবে গেছেন। তার স্ত্রী হাস্যউৎফুল্ল মুখে দৃশ্যগোচর হলেন। এবং তিনি যখন স্বামীর নিকটে এসে দাঁড়ালেন, তখন কুম্ভটি সম্মানসূচক টুপিটি একটু উঠিয়ে দিয়ে তার বন্ধুর হাতটি বগলে নিয়ে রাস্তায় হাটা ধরলেন। তিনি তখনও গল্পে ডুবে আছেন। এদিকে তার স্ত্রী ক্রোধে অন্ধ হয়ে আড়ংয়ের নীচে একা একা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।



ইউরেনাস জাতকদের মনোযোগী হয়ে ওঠার ক্ষমতা সত্যিই অসাধারণ। তারপরও তাদের চারপাশে কী ঘটছে না ঘটছে সবকিছুই তারা চাইলেই তাদের রাডারে ধরা পড়ে। তারা কোন আলোচনা চালিয়ে যেতে যেতেই পাশ্ববর্তী কক্ষে কী ঘটছে না ঘটছে সবকিছু সম্পর্কেই সজাগ থাকতে পারে অবশ্য যদি তাদের ইচ্ছে হয়। কখনও কখনও আপনি হয়তো গাল দিয়ে বলবেন যে কুম্ভটি আপনার একটা কথাও কানে তোলেনি, কিন্তু পরদিন টেপরেকর্ডারের মতোই আপনি যা যা বলেছিলেন সব কথা সে আপনাকে শুনিয়ে দিতে পারবে। কখনই কুম্ভদের চারপাশের পরিস্খিতির সবকিছু লক্ষ্য করার অবিদিত ক্ষমতাকে তুচ্ছ করে দেখবেন না। যদিও হয়তো মনে হবে যে তারা প্রায়ই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়, এমনকি যখন তখন নিগূঢ় মনোযোগের মধ্যেই বিস্মৃত হয়ে যায়। যেমনটি আমার বন্ধু প্রফেসরটি তার স্ত্রীর মধ্যে খুন করার মতো রাগের জন্ম দিয়ে হেটে হেটে চলে গিয়েছিলেন।



কুম্ভ জাতক বা জাতিকা যাই চিন্তা করে সেসবের সাথে ভবিষ্যতের কোন না কোন যোগাযোগ রয়েছে। ইউরেনাস শাসিতদের অজানা ব্যাপার বুঝে নেবার অদ্ভুত ক্ষমতা এবং রহস্যাবৃত গোপনীয়তাগুলো জেনে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে। তারা তাদের অনুমান দিয়েই এসব বুঝে নিতে পারে। আর অনুমানশক্তি তাদের মধ্যে একধরনের পূর্ব উপলব্ধির জন্ম দিয়ে দেয়। আমি এমন একজন কুম্ভকে চিনি যে ফোন বেজে ওঠার আগেই হ্যালো বলে ফেলে।



অনেক মানুষই আছে যারা রংধনুর মতো। বাচ্চারা তাদের জন্যে প্রার্থনা করে, শিল্পীরা তাদের ছবি আঁকে। স্বাপ্নিকরা তাদের পেছনে ছোটে। কিন্তু কুম্ভরা সবার থেকেই এগিয়ে। জীবনটা তার একবারই। আর এই একবারই তার সব। আর কী, সে এটাকে বুঝবে, বিভিন্ন আঙ্গিকে এর উপর গবেষণা চালাবে, অংশ অংশ করে, একটা একটা করে রঙ ঢেলে, এবং তারপরও এই এক জীবনের উপর তার দৃঢ় আস্খা বজায় থাকবে।

কোন কিছু ঠিকমতো জানার পর সেটাতে বিশ্বাস বা আস্খা আনা সহজ, কিন্তু কুম্ভদের লক্ষ্য যদিও ভবিষ্যতের কোন অস্খির নীলাকাশের দিকে, তবুও তারা বাস্তববাদী।



কুম্ভ জাতক লুইস ক্যারোল এ্যালিসকে ওয়ান্ডারল্যান্ডে পাঠিয়ে যেমন উদভ্রান্ত করে তুলেছিলেন, তেমনি আপনাকে ইউরেনাস জাতকদের অনিশ্চয়তার ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বভাবত শান্ত এবং ঠাণ্ডা প্রকৃতির এই কুম্ভরা প্রচলিত মতামত অমান্য করে আনন্দ পায়, এবং অধিকতর গতানুগতিক মানুষগুলোর সাথে হঠাৎ করে আকস্মিক ও খাপছাড়া আচরণ করে চমকে দিতে পছন্দ করে। সাধারণত বিনয়ী বক্তা এবং শিষ্টাচারী এই মানুষগুলো সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত মুহূর্তে সবচেয়ে অদ্ভুত কোন বক্তব্য বা আচরণ করে আপনাকে হতবাক করে দেবে। ইউরেনাসের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন সাধারণ জাতক হলো অর্ধেকটা আলবার্ট সুইটজার এবং অর্ধেকটা মিকি মাউস। সে পায়ে হয়তো স্যান্ডেল, বুট, খড়ম কিংবা পাইপ পরে থাকবে। কিন্তু কোন পরিস্খিতি বা অনুষ্ঠানে সে এটা পরছে সেদিকে তার লক্ষ্য তেমন একটা থাকবে না। সে হয়তো ইচ্ছে হলে খালি পায়ে কোথাও চলে যাবে, এবং তাকে দেখে আপনি হাসলে আপনার মুখের উপর সেও হেসে উঠবে। মাঝে মধ্যে কুম্ভরা গতানুগতিকতার প্রতি কটাক্ষ প্রদর্শন করতে উদ্ভট পোশাক আশাক পরিধান করে।



আপনি এই স্খির, বায়ু-সূচক রাশিতে জন্ম নেয়া মানুষগুলোকে চিনতে পারবেন তাদের বহুল উচ্চারিত একটি শব্দের মাধ্যমে - ‘বন্ধু’। কুম্ভ জাতক ফন্স্যাংকলিন রুজভেল্ট আগুন পোহাবার স্খানটার পাশে আলাপচারিতা শুরু করতেন এভাবে, “বন্ধুরা আমার...”, এবং প্রেমে বিচ্ছেদের পর ইউরেনাসসুলভ প্রশ্নটি হচ্ছে, “আমরা কি এখনও বন্ধু থাকতে পারি না?” কুম্ভরা খুবই দক্ষ কিছুও নয় আবার সরল সোজাও নয়। তারা অত্যন্ত উজ্জীবিতও নয় আবার উদ্দীপনাহীনও নয়। সার্বক্ষণিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ঝোঁক তাকে প্রতিনিয়ত পরবর্তী রহস্যটি সমাধানের পথে ধাবিত করে। এবং পরবর্তী এই আকর্ষণটি হতে পারেন আপনি। যে মানুষটিকে দেখলে মনে হয় যে তার মন পড়ে আছে লক্ষ মাইল দূরে, কিংবা সে একটা অদৃশ্য মাইক্রোসকোপ দিয়ে আপনাকে খুঁচিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে সে আর কেউ নয় স্বয়ং কুম্ভ। তার এই পরীক্ষা-নীরিক্ষা, অতি কৌতূহল এবং অন্যকে জানার প্রবল আকর্ষণ শেষ হলে অন্যের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি তার অকুণ্ঠ আগ্রহ জাগ্রত হয়। সেটা হোক গলির মোড়ের পুলিশ, কিংবা বারটেন্ডার, কিংবা হোটেলের পিয়ন, নাইটক্লাবের গায়িকা, কিংবা পাগলদের সাথে বসবাসকারী কোন ডাক্তার - কিংবা স্বয়ং আপনি - নিশ্চয়ই এটা আপনাকে একটা অস্বস্তি এবং হতাশায় নিমজ্জিত করবে।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে কুম্ভরা সবসময় পরিস্খিতি, বন্ধুবান্ধব এবং অপরিচিতদের বিশ্লেষণ করে চলে। যখন তারা একদম খোলাখুলি আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতির ব্যাপারে কৌশলহীনভাবে অপ্রত্যাশিত কোন প্রশ্ন করে বসে তখন সেটা হয়তো চরম বিরক্তির উদ্রেক করবে। অবশ্য যখন তারা জানবে যে এর মধ্যে তেমন বড়সর কোন ব্যাপার ছিল না তখন সে মনে মনে বিরক্ত হয়ে উঠবে। হয়তো হতাশও হয়ে উঠতে পারে। কোন একজনের উপর তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে হঠাৎ করে তার প্রতি এরকম আগ্রহচ্যুতি এবং নিজের পরবর্তী লক্ষ্যটির দিকে ঝুঁকে পড়ার তার এই বাজে স্বভাবটির মতো অপমানকর আর কী হতে পারে।


এদিকে সে অবশ্য অন্য লক্ষ্যটির দিকে ঝুঁকে পড়বার আগে নিশ্চিত হবে যে সে আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে আপনিই তার  কাছে বিশ্বের সবচে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। নিশ্চয়ই আপনি এরকম আচরণের শিকার হলে আপনার গা ঘিনঘিনিয়ে উঠবে।



বন্ধুদের প্রতি বাৎসল্য ছাড়া তাদের তেমন ঘনিষ্ঠ কেউ নেই বললেই চলে। গুণের সমাবেশ না দেখে তারা বরং বন্ধুদের সংখ্যার দিকেই বেশি মনোযোগী। এবং একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কোন সম্পর্কেই তাদের স্খায়ীত্ব থাকে না। একজন বা দুজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাথে সময় অতিবাহন করার মতো সময় তার নেই, যেখানে এতো শত শত নতুন আবিষ্কারের দিকে তার ঝোঁক লেগে আছে। এরকম একজন নৈর্ব্যক্তিক মানুষের কাছে আবেগের কোন মূল্য রয়েছে কি না তাতে দ্বন্দ্ব থেকেই যায়। তবে আপনি যদি তার হৃদয়ের অতলে দাগ কাটতে পারেন (সেটা অবশ্য আবেগের থেকে একটু বেশিই প্রগাঢ় হতে হবে) সেক্ষেত্রে সে হয়তো তার এই নব নব আবিষ্কারের মোহ থেকে বেরিয়ে এসে দেখতে চাইবে যে সে কী রত্নটিকে হারাতে বসেছিল।



ইউরেনাস জাতকদের উপর অদ্ভুত এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ কাজ করে। এবং প্রায়শই তারা বিশ্বমানবতার কাছে ভুল বলে প্রমাণিত হয়। এর কারণ হলো বিশ্ব মানবতা এখনও কুম্ভদের চিরশান্তির পরিবেশের ধারণার সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে সক্ষম হয় নি। যেহেতু পরিবর্তনের বাহক ভবিষ্যতে বসবাস করে এবং ক্ষণিকের জন্যে এসে বর্তমানকে গৌরবান্বিত করে তোলে তাই সে হয়তো অধিকতর একঘেয়ে মানুষগুলোর প্রতি কিছুটা ক্রুদ্ধ এবং বিরক্ত আচরণ করবে। সে এটা বুঝতে পারে বলেই তার মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ আরও তীব্রভাবে গেড়ে বসে। কিন্তু অন্যরা তার সাথে এক মত পোষণ করে না বলেই যে সে পিছু হটবে তেমন হবার নয়। তাই সে হয়তো তার নি:সঙ্গ মেঘের রাজ্যে ভেসে বেড়াতে থাকে। আর আমরা এই জাগতিক মানুষগুলো ভেবে কুল পাই না যে সে একাকী কী করছে। জ্যোতিষশাস্ত্র আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, “কুম্ভরা যেটা আজ আমাদের বলছে, সেটা আমাদের বুঝতে আরও ৫০ বছর সময় লাগবে।” এটা সত্যও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে এটা যে ইউরেনাস শাসিত মানুষগুলোর সাথে আমাদের ব্যবধানকে খুব সংকুচিত করে তোলে এমনও নয়। কেননা এই রাশিটি হলো প্রতিভাধরদের রাশি, এবং সেটা সত্য, কেননা যেসব মানুষের নাম হল অব ফেমে লেখা আছে তাদের ৭০ শতাংশই হয় এই রাশির জাতক, কিংবা তাদের উপর কুম্ভের প্রভাব রয়েছে। অপরদিকে মেন্টাল হসপিটালে বন্দিদের একটা বড় অংশ এবং যারা কিছুদিন পরপরই শয্যাগত হয় এবং সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হয় তাদের একটা বড় অংশ কুম্ভ জাতক বা জাতিকা।


যদি এতেও আপনার না হয়, তাহলে বলি, সে ওপাশের মানুষটির একটি কথা না শুনেও বলে দিতে পারে সেটা কে, তাকে কলার আইডি পড়তে হয় না। আব্রাহাম লিংকন তার নিজের মৃত্যুর উপলব্ধিটা আগেভাগেই কয়েকবার পেয়েছেন এবং চমকে দেবার মতো সম্ভাব্য মৃত্যুর বর্ণনাও দিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি কুম্ভরই একদম মৌলিক একটি সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেটা আপনার গোপনতম ইচ্ছাটিও তার কাছে প্রকাশিত করে ফেলে। আপনার সাথে কথা না বলেই সে বুঝতে পারবে আপনার মধ্যে কোন একটা কিছুর গভীর প্রয়োজন রয়েছে, যেটা হয়তো আপনার নিজের কাছেও অস্পষ্ট।


এইরকম যাদুময় বৈশিষ্ট্যের গুণে নিজের মনোভাবনাগুলোও সে অন্যদের মধ্যে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মতো প্রবাহিত করতে পারে। এমনকি যখন সে কোন কিছুর দিকে পেছন ফিরে আছে তখনও সেই কোন কিছুর প্রকৃতি সে ঠিকই বুঝতে পারবে। টেলিফোনে কথা বলার মাঝখানে দীর্ঘ নীরবতার সময়ও সে ঠিকই চিন্তা-ভাবনার আদান প্রদান ঘটিয়ে চলেছে। অথচ আপনি হয়তো ভাবছেন যে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। অনেক কুম্ভের আবার টেলিগ্রাম পাঠাতে টেলিগ্রাম অফিসে যাবার প্রয়োজন হয় না।



কিন্তু তাদের এই চিন্তা-প্রক্রিয়ায় কোন কুসংস্কার নেই। একজন প্রকৃতই বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি, হোক সে মেকানিক কিংবা একজন সঙ্গীতশিল্পী, সে কোন একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হবার আগে সবকিছু যাচাই বাছাই করে নেবে। কিন্তু একবার কোন সিদ্ধান্ত বা মত তার মনে জায়গা করে নিলে সেটা সেখানে স্খিরভাবে গেঁথে যায়। স্খির বলতে স্খিরই বটে, কোন নড়চড় নেই। যেমনই দৃঢ়ভাবে সে সরকার এবং সমাজের পরিবর্তন চায় ঠিক তেমনিই শক্তভাবে কোনকিছুর বিনিময়েই নিজের মত থেকে একচুল নড়তেও সে রাজী নয়। বিশ্বের অগ্রগতির ব্যাপারে সে খুবই খোলামেলা, কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত আচরণের ক্ষেত্রে বা কোন চিন্তা মাথায় ঢুকলে সেটার কোন পরিবর্তন তার মধ্যে ঘটে না - এটা খুবই রক্ষণশীল এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবেরই লক্ষণ। আপনিও বুঝতে পারবেন যে তার স্বাধীনতাবোধেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।



কুম্ভরা মিথ্যাচার এবং প্রতারণা ঘৃণা করে এবং তারা ধার দেয়া এবং নেয়াও অপছন্দ করে। তারা আপনাকে টাকা উপহার হিসেবে দিতে পারে, কিন্তু তাদের কাছে টাকা ধার চেয়ে লাভ হবে না। আপনি কি আপনার কুম্ভ জাতক বন্ধু শিপলুর কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ টাকা চেয়েছেন? আপনার বন্ধুটি নিশ্চয়ই আপনাকে অবাক করে দিয়ে নোটটা আপনাকে বের করে দেখিয়েছে এবং দিয়েছেও। তার টাকাটা যথাসময়ে ফেরত দিতে হবে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে কিংবা টাকা  ফেরত দেয়ায় গড়িমসি করলে আপনাদের বন্ধুত্বে একটা বড় ফাটল ধরতে পারে। কুম্ভরা নিজেদের প্রতিজ্ঞা রাখে, তারা তাদের দেনা পাওনা সময়মতো পরিশোধ করে এবং আপনার কাছ থেকেও তারা একই আচরণ প্রত্যাশা করবে। কিন্তু এহেন সততাবোধ থাকা সত্ত্বেও তাদের আচরণ অনেকসময়ই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। যদিও তারা ভণ্ডামী এবং প্রতারণা ঘৃণা করে কিন্তু অত্যন্ত ধূর্ততাপূর্ণভাবে প্রশ্নের উত্তর দেবার কারণে কুম্ভদের ব্যাপারে মানুষের ভুল ধারণা জন্মে। কিন্তু অন্য কাউকে যদি একই দোষে দোষী বলে সে ধরতে পারে তাহলে ঠিকই রাগান্বিত হয়ে অনেক কথাই সে শুনিয়ে দেবে।


সাধারণত, একজন কুম্ভকে কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করার কথা বলে সেই সময়টিতেই তার দেখা পাওয়া মুশকিল। সে নিজেও হয়তো কোন নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না, কেননা কোন একটি নির্দিষ্ট দায়িত্ব কিংবা বাধ্যবাধকতার দিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিজেকে ঠেলে দিতে তার একদমই আগ্রহ নেই। সে হয়তো আপনাকে কোন নির্দিষ্ট সময়ে দেখা করার কথা না বলে বরং খাপছাড়াভাবে বলবে, “আগামী মঙ্গলবারে হয়তো তোমার সাথে আমার দেখা হবে।” (মাঝে মধ্যে এটা অবশ্য এ সপ্তাহে না হয়ে পরের সপ্তাহের মঙ্গলবারও হয়ে ঊঠতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনি না বুঝলে আপনারই ক্ষতি)।


অবশ্য তারপরও আমি বলবো যে আপনি যদি তাকে কোন চিঠি লিখে কোন নির্দিষ্ট স্খানে নির্দিষ্ট সময়ে তাকে দেখা করতে বলেন এবং সে যদি সেটাতে সম্মত হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে সে আসবে এবং যথাসময়ে। আপনি এ কথায় পরিপূর্ণ আস্খা রাখতে পারেন। এবং নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তার সময়ানুবর্তিতাও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। বরং আপনি নিজে দেরি করে ফেলবেন না যেন। যদি পথেই তাকে কেউ কিডনাপ না করে থাকে তাহলে সে নির্ভরযোগ্য মানুষটির মতোই যথাসময়ে যথাস্খানে হাজির হবে। (অবশ্য যেহেতু সে কুম্ভ, সেহেতু রাস্তায় কিডন্যাপ হওয়া বিস্ময়কর কিছু নয়। এসব মানুষের জীবনে যখন তখন যেকোন কিছুই ঘটতে পারে। যেকোন কিছু বলতে আমি পরিষ্কারভাবে যেকোন কিছুই বোঝাচ্ছি।) তার কাছ থেকে আপনি খোলামেলা মন্তব্য প্রত্যাশা করতে পারেন, কিন্তু তাই বলে আপনার জীবন কীভাবে যাপন করতে হবে সে ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা হয়তো সে আপনাকে দেবে না। উল্টোভাবে, তার নিজের জীবন কীভাবে যাপন করতে হবে এবং সে কী চিন্তা করবে না করবে সে ব্যাপারেও আপনার পরামর্শ নিতে সে মোটেও আগ্রহী নয়। মেষ, সিংহ এবং মিথুনদের মতো তার মধ্যে নিজের চিন্তা বা জীবনদর্শনগুলো মানুষের মধ্যে চাপিয়ে দেবার কোন আগ্রহ কাজ করে না। তার মতে প্রত্যেকেরই নিজের জীবন আছে এবং নিজের ব্যক্তিগত আকাáক্ষা রয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের নিজের সুর অনুযায়ী নাচবে এবং তাদের নিজেদের স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। এটা একটা মজার ব্যাপার যে, পৃথিবী যতই কুম্ভসুলভ জীবনদর্শনের প্রতি ঝুঁকছে, ততোই সেই সব ফুলেল লোকজন এবং গুরুরা এই নতুন জীবনের এর দূত হয়ে উঠছে। তাদের অতিরঞ্জিত ফ্যাশনের মধ্যে শুধু কুম্ভসুলভ মতাদর্শ: সমতা, ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, বাঁচো এবং বাঁচতে দাও, সত্যের অনুসন্ধান করো, নতুন আবিষ্কারের প্রতি সচেষ্ট হও এবং ধ্যানমগ্ন হও এসবই ঘুরে ফিরে আসছে।



কোন কারণ বা ফল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তীব্রভাবে বিতর্ক করতে দেখবেন না এই কুম্ভদের। তারা তাদের নিয়ম মতো চলে এবং তাদের কাছে এটুকুই যথেষ্ট। যারা বোঝে না বা যাদের জ্ঞান কম তাদের মধ্যে জ্ঞানের আলো সঞ্চারণের জন্যে মেষ, বৃশ্চিক, সিংহ এবং ধনু - এরাতো আছেই  তরোয়াল হাতে উদ্দীপ্তভাবে লড়বার জন্যে। ইউরেনাস-শাসিতরা বরং মানুষের দু:খ-দুর্দশার কথা শুনে নিজেদের মধ্যে সহানুভূতিশীল আবেদন বৃদ্ধি এবং বিপ্লবের কারণগুলো কী সেগুলো অনুসন্ধানেই ব্যস্ত রয়েছে। কুম্ভরা খুবই দ্রুত বা বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন চায়। কিন্তু সেই বিপ্লবাত্মক পরিবর্তনের দায়িত্বটা তারা অন্যের ঘাড়েই বর্তে দেয়। তাই বলে সে মানসিক বা শারীরিকভাবে কাপুরুষ নয়। যুদ্ধের জন্যে তার তেমন প্রস্তুতি নেই।


তার গভীর প্রণয় তাকে আপনার আপাদমস্তক সবকিছু যাচাই করা থেকে বিরত রাখবে এটা ভাববেন না। সে জানতে চাইবে আপনার মস্তিষ্কের ভেতর কী জল্পনা কল্পনা চলছে, এবং সেটা জানতে সে চরম উদ্ভট কিছু প্রশ্নও করে বসতে পারে। কিন্তু একবার যদি আপনাকে সে তার হৃদয়ে স্খান দেয় তাহলে হাজারও কুৎসা এবং কানকথা শুনলেও সে তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হবে না। একথায় নিশ্চয়ই কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন? সে যদি আপনার সত্যিকার বন্ধু হয় তাহলে আপনার শত্রুদের কোন বক্তব্যেই সে ভ্রুক্ষেপ করবে না কিন্তু প্রচণ্ড কৌতূহলবশত সে হয়তো মনোযোগের সাথে সব কথাই শুনবে। অবশেষে নিশ্চিতভাবেই সে নিজের মনকে শেষবারের মতো স্খির করে নেবে।


ইউরেনাসদের রোগ মূলত রক্ত কিংবা শ্বাস প্রবাহর সাথে জড়িত। কুম্ভরা সাধারণত শীতে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়, এবং গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতায় আক্রান্ত হয়। যদি তাদের মানসিকতাকে নেতিবাচক দিকে ধাবিত করা হয় তাহলে কুম্ভরা বৃদ্ধ বয়সে সাধারণত রগ ফুলে ওঠা এবং আর্টারিগ্রন্থির শক্ত হয়ে ওঠা রোগে আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে পায়ের দুর্ঘটনা কবলিত হবার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া থুতনি এবং গোড়ালিতেও আঘাত পাবার আশঙ্কা রয়েছে। গোড়ালির অস্খিগুলো সাধারণত দুর্বল, আর দুর্বল রক্ত প্রবাহের দরুন তাদের পায়ে ব্যথা থাকতে পারে, গলা ফুলে উঠতে পারে, এবং কখনও কখনও তাদের হার্টের প্যালপিটিশনও হতে পারে। তবে এগুলো হয়তো ততো মারাত্মক আকার ধারণ করবে না যদি তার জন্মকুষ্ঠিতে কোন কুপ্রভাব না থাকে। ইউরেনিয়ানদের প্রচুর বিশ্রাম, সজীব বাতাস, ঘুম এবং ব্যায়ামের প্রয়োজন রয়েছে। তবে সাধারণত তারা এই রোগমুক্তির উপায়গুলো মেনে চলে না। তারা খুব বেশি সজীব বাতাস অবশ্য পায় না, কেননা তারা তাদের জানালা বন্ধ রাখে, এবং কম্বল ভাজ করে গায়ে দিয়ে রাখে, কিন্তু তারপরও তাদের অভিযোগ যে ঠাণ্ডা লাগছে।  দু:শ্চিন্তা তাদের মানসিক সক্রিয়তার সাথে মিশে থাকে এবং তাকে আরামদায়ক ঘুম থেকে বঞ্চিত করে এবং বিশ্রামের সুযোগ যদি বা তারা পায়, তাদের সেই বিশ্রাম দু:স্বপ্ন দেখে বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠে। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি তার আগ্রহ না জন্মালে তাকে দিয়ে দৌড়াবার চিন্তা করা তো দূরের ব্যাপার, জোরে হাটানোই মুশকিল হবে। তার মন যদিও সার্বক্ষণিক সক্রিয়তার মধ্যে রয়েছে, কিন্তু তার শরীরের পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যয়ামের বা কায়িক শ্রমের দরকার রয়েছে। কুম্ভদের শরীর অবশ্য ছোটবেলায় খুবই ভালো থাকে। তবে নিজেদের শরীরের ব্যাপারে তাদের কিছু অদ্ভুত অভিযোগ থাকতে পারে, তবে সেটা ডায়াগনোসিস করা রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার। তাদের মূল সমস্যা শুরু হয় যখন বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের জীদটাও সমানতালে বাড়তে থাকে। এই মানুষগুলোকে অবশ্য খুব সহজেই মোহাবিষ্ট বা হিপনোটাইজড করা সম্ভব। নিজেদের অনুমান দিয়েই তারা অবশ্য এই ধারণা পেয়ে যায় আর তাই টাকার বিনিময়ে হোক কিংবা ভালোবাসার খাতিরেই হোক তারা কোন হিপনোটিস্ট-এর শরণাপন্ন হতে চায় না। এটা অবশ্য তাদের একটা ভুল। কেননা একজন ভালো মেডিকেল হিপনোটিস্টের কাছে নিয়ে গেলে তার অদ্ভুতুরে ভয়গুলো হতো মন থেকে সহজেই দূর হয়ে যেতো। ইলেক্ট্রিকাল ট্রিটমেন্টের ব্যাপারেও তাদের একই মনোভাব, কিন্তু এটাও তার উপকারে আসতে পারতো।


রাজনীতি তাকে প্রবল আকর্ষণ করে, খেলাধুলা তার মনকে সবসময় আচ্ছন্ন রাখে এবং বাচ্চারা তার মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করে। এবং একইভাবে ঘোড়া, গাড়ি, বয়স্ক মানুষ, মেডিকেল ডিসকভারি, লেখক, গণক, মদ্যপ, পিয়ানো, উইন্ডমিল, প্রার্থনা - এবং বলা বাহুল্য বেইজবল এবং লুইস আর্মস্ট্রংও তার এই কৌতূহল এবং ভালোলাগার তালিকায় একই তীব্রতার সাথে মিশে আছে।


লোকজনের মধ্যে মিশে যান, এবং আপনার আত্মঅহংকার ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে দিন, নতুবা তার এই নৈর্ব্যক্তিক আচরণ আপনার আত্মঅহংকার ধ্বংস করে দেবে। তার চোখে একটা অদ্ভুত, দূরবর্তী চাহনী আছে কি না দেখুন। তার চাহনী দেখে মনে হবে যেন সেখানে কোন যাদুময়, রহস্যাবৃত্ত জ্ঞানের ছটা রয়েছে। যাতে আপনি প্রবেশ করতে পারছেন না। কুম্ভদের চাহনীতে সাধারণত কোন অর্থময়তা নেই, বরং একটা স্বপ্নালু, চিন্তাশীল অভিব্যক্তির ছোয়া থাকে। সাধারণত তাদের চোখ হয় নীল (তবে সব সময় নয়), সবুজ কিংবা ধূসর। তাদের চুলগুলো প্রায়ই সোজা এবং সিল্কি হয়। চুলের রঙ সোনালী, ধূসর, বা হালকা সাদা। তাদের গায়ের রঙ হয় মলিন। এবং তাদের উচ্চতা সাধারণের থেকে একটু বেশি দেখা যায় (অবশ্য জন্ম লগ্নে কোন প্রভাব যেকোন রাশির সাধারণ বৈশিষ্ট্যেই পরিবর্তন আনতে পারে)। তার মধ্যে তার যোগ্যতার একটা স্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাবেন। ইউরেনাস শাসিতদের বৈশিষ্ট্যগুলো খুব কাট-ছাট করা এবং স্পষ্ট। যেন পাঁচ টাকার কয়েনের গায়ে খচিত যমুনা ব্রিজের প্রতিকৃতির মতো। কোন সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার সময় কিংবা তার দিকে কোন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলে কুম্ভদের মাথাটা কিছুটা নুইয়ে ফেলার একটা প্রবণতা দেখা যায়। মাথাটা হঠাৎ করে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, কিংবা একদিকে কাত হয়ে যায়। এবং আপনার প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় থাকে। মজার ব্যাপার হলো ইউরেনিয়াসদের মধ্যে দ্বৈত লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়, যেমন পুরুষদের চওড়া নিতম্ব কিংবা নারীদের চওড়া কাঁধ।



স্বাধীনতাপ্রিয় এই ইউরেনাস মানুষগুলো বস্তুত মজার, লম্পট গোছের, মৌলিক, অভিমানী এবং আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু তারা কুশলী, ভদ্র, সহানুভূতিশীল এবং লাজুকও হতে পারে। কুম্ভরা অনেক মানুষের মধ্যে থাকলে নিরাপত্তা বোধ করে এবং বন্ধু দিয়ে ঘেরা থাকে। এরপর হয়তো তারা হঠাৎ করে বিষণí এবং মনমরা হয়ে উঠবে এবং তখন তারা একাকী থাকতে চাইবে। কঠোরভাবে নিজের নি:সঙ্গতা কামনা করবে। কিন্তু সবার মাঝখানে থাকুক কিংবা একা একা থাকুক নিজের তীক্ষî উপলব্ধির ক্ষেত্রে সে একই সাথে সজাগ এবং গভীর চেতনার অধিকারী। তারা অন্যদের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন। ইউরেনাস তার জাতকগুলিকে গতানুগতিক সমস্ত নিয়মকানুন এবং রীতিনীতির বিরুদ্ধে স্বভাবসুলভ একজন বিদ্রোহীতে পরিণত করে। এরা ভাবে যে একটা আকস্মিক এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তনই এখন এই বিশ্বে এবং বিশ্বের মানুষগুলোর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। (অবশ্য যদি সে রাজনীতির সাথে জড়িত থাকে তাহলে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে অসময়ে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে তুলে ধরে নিজের কৌশলটাকে ভেস্তে দেবার মতো বোকা সে নয়)।


সে হয়তো একদম কাট-ছাট মিথ্যাটা বলবে না। কিন্তু এতো সূক্ষ্মভাবে সে আপনার চোখে ধুলো দেবে যেটা তার সার্বক্ষণিক সততা প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধাশীল বক্তব্যগুলোর সাথে ঠিক খাপ খায় না। একইভাবে তার এই আপোষহীন সত্যের সন্ধানের সাথে নিজের উদ্দেশ্য বা প্রকৃত ইচ্ছাকে ঢেকে রাখার প্রবণতা অসঙ্গতিপূর্ণ। যদি তাকে নিজের সম্বন্ধে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতে হয় তবে তাকে এক সময় না এক সময় এই অসঙ্গতির মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে।



কুম্ভরা তাদের আদর্শবাদীতার কারণে খুবই প্রশংসিত হয়। হয়তো একটু অতিরিক্ত প্রশংসা পায়, কেননা সত্যিকার আদর্শবাদীতায় অন্ধ ভক্তি এবং আশাবাদী মনোভাব থাকতে হয় ।


কিন্তু কোন ব্যর্থ হবার আশঙ্কাজনক বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় লড়ে বোকামী করার মানুষ সে নয়। সে জানে স্বপ্নগুলো আসলে ঘোর। যেমন রঙধনু সে খুব নিগূঢ়ভাবে দেখেছে এবং এখনও ভালোবাসে। ঐতিহ্য এবং কর্তৃপক্ষ তাকে মোটেও প্রভাবিত বা মুগ্ধ করতে পারে না। সে হয়তো শান্তভাবে সেগুলোর ব্যাপারে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে কিন্তু একই সাথে আবেগময়ভাবে সেগুলোর ক্ষুদ্রতা, জটিলতা, কুলশতা, দুর্নীতি এসবের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে।



তার শরীর ও মন দুটোই হতে হবে বাতাসের মতোই স্বাধীন। একজন কুম্ভকে এক জায়গায় আটকে রাখা আর প্রজাপতিকে শান্ত করা, বা বসন্তের বাতাসকে ঘরে আটকে রাখা, বা শীতের কনকনে হাওয়া বোতলে ভরে রাখা একই রকম অর্থহীন। এটা করাও যাবে না। আর তাছাড়া, কার এতো দায় পড়েছে এই চেষ্টা করার? যদিও তার জীবনদর্শন সময়ের থেকেও এগিয়ে আছে, এবং সেটা বুঝে উঠতেও আপনার সমস্যা হয়, কিন্তু একবার চেষ্টা করে দেখুন। আপনি হয়তো কিছুটা জ্ঞানী হয়ে উঠবেন, এবং হয়তো কিছুটা পাগলামীও নিজের চরিত্রে জুটিয়ে নেবেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। তার জ্যোতিষশাস্ত্রীয় ফুলটি হলো ড্যাফোডিল। আর এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ‘পাগলা’ (‘ড্যাফি’) শব্দটা কোথেকে এসেছে।



ইউরেনাস সবসময়ই কুম্ভদের মন ভাঙ্গা গড়ায় লেগে আছে। পরিবর্তনসূচক এই দুর্বোধ্য এবং সহিংস গ্রহটি তাকে ভবিষ্যতের একটি সুস্পষ্ট চিত্র দেখার ক্ষমতা দিয়ে যায়। কুম্ভদের জন্ম বিশ্বমানবতার জন্যে। সে বিশ্বমানবতার সত্যিকার আশা এবং তাদের জন্য সত্যিকার আদর্শগুলোর বাহক। যদিও তার ধাতু ইউরেনিয়াম, বস্তুত এটি কোন ধাতু নয়। কিন্তু এটা একটা বিকিরণক্ষম ধাতব কেমিকেল যেটা কেবল যৌগিক এবং মিশ্র অবস্খায় পাওয়া যায়। পারমাণবিক গবেষণায় এর প্রয়োজন রয়েছে। এটা সার্বক্ষণিক বিকিরণ ঘটাতে সক্ষম।  নেপচুনের উপর উজ্জ্বল আলোর চৌম্বকীয় শক্তির প্রতিফলনে হয়তো তার গোপনীয়তাগুলো যারা দেখতে আগ্রহী তাদের জন্যে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু শুধু ক্ষণিকের জন্যেই আপনি তার নি:সঙ্গ সত্তার খোঁজ পাবেন। এবং আপনিও যদি তার মতোই আগামীকালে বাস করেন তাহলে দেখবেন তার এই নি:সঙ্গ সত্তা অনেক প্রাচীন কোন কালে শনিসুলভ জ্ঞানে জ্ঞানি হয়ে আছে।


একটা চমৎকার বাক্য আছে এ ব্যাপারে। প্রতিভা, এবং পাগলামীর মাঝামাঝি একটা অবস্খা আছে, আর আপনার কুম্ভ বন্ধুটি এই মাঝামাঝির কোন পাশটায় পরে সেটা বলা মুশকিল। এই ধরনের দ্বন্দ্বের পেছনে যে কারণটা থাকতে পারে সেটা হলো তাদের দৃষ্টিতে আদর্শ মানুষগুলোকে ছোট করে দেখার প্রবণতা। একটা প্রচলিত উক্তি আছে, “তারা ফুলটনকে তাচ্ছিল্য করলো এবং তার বায়ুচালিত নৌকাটিকে কোন পাত্তাই দিলো না।” “তারা ভেবেছিল এডিসন একজন মানসিক প্রতিবন্ধি ছিলেন।” “তারা লুইস প্যাস্টেয়ার কে বন্দি করতে চেয়েছিল।” এগুলো হলো উচ্চমার্গের চিন্তাশীল মানুষদের প্রতি পার্থিব, বৈষয়িক মানুষের চেতনার পরিচায়ক কিছু উদাহরণ।


ইউরেনাস হলো ঠাণ্ডা আচরণ, বৈষয়িকতা, এবং আনন্দের আতিশয্যতার একটা অদ্ভুত মিশ্রণ। আর এই মানুষগুলোর মধ্যে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্খ মানুষগুলির প্রতি সমব্যথী হয়ে ওঠার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এটাও একটা দুর্বোধ্য বিষয় যে মানসিক বিকারগ্রস্ত দের সাথে কুম্ভদের শান্ত কথোপকথন তাদের স্বস্তি দেয়। হিস্টিরিয়াগ্রস্খ মানুষ এবং ভীত বাচ্চাদের শান্ত করার প্রতি একটা তীব্র ঝোক কুম্ভদের মধ্যে দেখা যায়। এই গভীর অনুধাবনের ক্ষমতার উৎস কি তার নিজের হালকা আবরণ দিয়ে ঢাকা অতি সংবেদনশীল স্নায়ু প্রক্রিয়ার ফল?



কুম্ভদের দৃষ্টিভঙ্গি এতোই মহৎ যে তাদের মধ্যে সংস্কারদুষ্ট মানসিকতা খুঁজে পাবেন না, যদি না তাদের মধ্যে গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর কুপ্রভাব থাকে। এমন কি যদি বা তার মধ্যে সংস্কারদুষ্টতা থাকে তাহলে সেটা তাকে দেখিয়ে দেয়া হলে সে অত্যন্ত বিচলিত হবে। তার মধ্যে ভাতৃত্ববোধ এতটাই তীব্র যে যদি কোন একজন দুর্লভ কুম্ভকে সহ্যহীনতার দোষে দোষী করা হয় তো সে যে শুধু সে ব্যাপারে সতর্ক হয়ে উঠবে তাই নয় বরং নিজের এই দোষকে ঘৃণাও করবে। সাধারণভাবে, প্রতিটি মানুষকেই সে নিজের ভাই বা বোন বলে গণ্য করে। উঁচু এবং প্রভাবশালী সমাজটাতে সে যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে বিচরণ করবে তেমনিভাবে বস্তিতেও তার মেলামেশা হবে সহজ স্বাভাবিক। সে সব উৎস থেকেই জ্ঞানার্জন করবে এবং সবখানেই সেটার বহি:প্রকাশ করবে। অবশ্য তার বিচ্ছিন্নতাবোধের সময়গুলোতে হয়তো তার এই বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পাবে না। অবশ্য তার এই বিচ্ছিন্নতাবোধ তেমন দীর্ঘ সময়ের জন্যে নয়। এবং আপনি তার বিরহকাতর হয়ে ওঠার আগেই সে আবার তার বন্ধুসুলভ আচরণ নিয়ে হাজির হয়ে যাবে। তার নীরবতাময় নি:সঙ্গতাকে ভঙ্গ করবেন না। যখন সে একা থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে তখন সে সত্যিই মনে প্রাণে একা থাকতে চায় এবং তার মানে এই নয় যে সে আর এই স্রোতে এসে মিশবে না, তা সে যতই নিজের ফোন নম্বর বদলে ফেলুক না কেন। তার ঠিকানাও বদলায় নি আর সে নিজেও বদলায় নি। দীর্ঘ সময়ের জন্যে মানুষের সঙ্গ সে কিছুতেই ত্যাগ করতে সক্ষম নয়। তার অনুপস্খিতিকে অগ্রাহ্য করুন। দেখবেন অতি শীঘ্রই সে আবার তার সেই বাসায় পড়া স্যান্ডেল পরে তার স্বভাবসুলভ কৌতূহল আর সতর্কতা নিয়ে টাউনের এখানে ওখানে নিজের উপস্খিতিকে স্পষ্ট করে তুলছে।


যদি বা সে অসতর্ক অবস্খায় কোন যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে যায়, তাহলে সে হয়তো অন্ধভাবে তার অস্ত্র ছুড়তে শুরু করবে। কিংবা সে নিতান্তই সহজে তর্ক এড়াতে বিপক্ষের মত মেনে নেবে। তার প্রতিক্রিয়ার কোন নির্দিষ্টতা নেই, তবে একটা ব্যাপারে তার প্রতি নিশ্চিত থাকা যায়। পরবর্তী দিনই তার মত আবার সেই পূর্বের মতের মতোই দৃঢ় এবং স্খির হয়ে উঠবে। যে তর্কে পটু সে সহজেই তার এই বৈশিষ্ট্যটির সুযোগ নিয়ে নেবে, কেননা সে বরং বিতর্কের কোন প্রয়োগমূল্য আছে কি না সে ভাবনায় মগ্ন হয়ে ওঠে। নিজের মতে স্খায়ী থাকলেই কুম্ভরা ভালোভাবে লড়তে সক্ষম হয়।


সে নিজের মতেই স্খির থাকে এবং বিতর্ক ত্যাগ করে। তার সত্য-প্রেমী মন, এক ইঞ্চিও অবশ্য নিজের মত থেকে বিচ্যুত হবে না। তবে বিতর্কের অসুন্দর দিকটি হয়তো সে এড়িয়ে যেতেই বেশি আগ্রহী। সমগ্র বিশ্ব তার নিজস্ব মতামত এবং চিন্তাধারার বিরুদ্ধে বিতর্কের ঝড় তুললে কিংবা তার উপর আবেগময় চাপ প্রয়োগ করলেও সে নিজের পথ থেকে একচুল নড়বে না। তাতে তার আশে পাশে যতোই চোখ ধাঁধানো আতশ বাজি ফুটে উঠুক না কেন। আমেরিকার দুই কুম্ভ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন এবং ফন্সাংকলিন রুজভেল্ট দুজনেই এই বৈশিষ্ট্যর প্রমাণ রেখে গেছেন। তাদের দুজনের মতাদর্শ কোনই জনপ্রিয়তা পায়নি। নিজেদের মতাদর্শ স্খাপনের ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোন আগ্রাসী মনোভাব লক্ষ্য করা যায় নি। কিন্তু সহযোগিতার চরম অভাব এবং প্রতিপক্ষের তীব্র বাধা থাকা সত্ত্বেও ঠিকই সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।



অন্য যে কারণে কুম্ভরা এতো বেশি শত্রুভাবাপন্ন সমালোচনার শিকার হয় সেটা হলো তারা অত্যন্ত আকস্মিক এবং খাপছাড়া। তারা আপনাকে দক্ষিণের দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে, তারপর কোন প্রস্তুতি নেবার সুযোগ না দিয়েই আকস্মিকভাবে উত্তরদিকে মোড় নেবে। কুম্ভদের মধ্যে তাদের গতি-বিধি আপনাকে না জানাবার ব্যাপারে একটা অটল মনোভাব কাজ করে। আমার এক বন্ধুর বাবা যিনি ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নিয়েছিলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তার স্ত্রীর একটি নষ্ট চুলার ব্যাপারে অভিযোগ কানেও তুললেন না। বরং খবরের কাগজের মধ্যে ডুবে থাকলেন, এবং স্ত্রীর অভিযোগগুলো পুরোপুরি বুলে গেলেন। একদিন হঠাৎ করেই এক মিস্ত্রি এসে একটা আনকোড়া নতুন চুলো নিয়ে জায়গামতো বসিয়ে টসিয়ে দিয়ে একাকার অবস্খা। একদম আকস্মিক। তার স্ত্রীর চোখতো ছানাবড়া। অবশ্য স্বামীর এহেন আচরণ সম্পর্কে তার ততোদিনেই জ্ঞাত হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।



মানুষের ব্যাপারে আস্খাটা কুম্ভদের মধ্যে স্বভাবসুলভভাবে উদিত হয় এমন ভাবার কোন কারণ নেই, অন্তত যতক্ষণ না সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আপনাকে যাচাই করে নিচ্ছে, এবং পারলে আপনার অন্তরটাকেও বুঝতে পারছে ততোক্ষণ। আপনার প্রতিটি শব্দ এবং আচরণের প্রতিই তার এই সূক্ষ্ম নিরীক্ষা হয়তো আপনাকে খুবই বিরক্ত করে তুলবে। আপনার হয়তো মনে হবে সে যেন ভবিষ্যতের জন্যে আপনার বৈশিষ্ট্যগুলোর একটা তালিকা গঠন করে রাখছে। ঠিক তাই। তাকে দেখলে হয়তো মনে হবে যে সে কোন স্বপ্নময় কুয়াশার মাঝে একটু পর পর হারিয়ে যায়, কিন্তু তাই বলে আপনি কি বিশ্বাস করেন না? সে হয়তো পরবর্তী কোন একদিন বলে দেবে আপনার চোখের পাতা কয়টি। আপনার কুম্ভটির কাছ থেকে কখনই প্রত্যাশা করবেন না যে সে আপনার রূপ দেখে পটে যাবে।

No comments:

Post a Comment