Wednesday, June 6, 2012

তুলা (২৪ সেপ্টেম্বর - ২৩ অক্টোবর) : সাধারন বৈশিষ্ট্য

কীভাবে চিনবেন

তুলা জাতকেরা রুক্ষ হতে ঘৃণাবোধ করে, কিন্তু তারপরও তারা আপনার দেয়ালে টাঙানো ভাঁজ পড়া ছবিটাকে সোজা করে দেবে এবং আপনার ঝির-ঝির করা টিভি সেটটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তুলারা মানুষ ভালোবাসে, কিন্তু অনেক মানুষের ভিড় তাদের অপছন্দ। শান্তির পায়রাদের মতোই সুশীলভাবে তারা অন্যদের ঝগড়া-বিবাদে মধ্যস্খতা এবং মীমাংসার জন্যে যাবে। কিন্তু তারা নিজেরাও ভালো একটা বিতর্ক করা থেকে পিছপা হয়না। তারা সুশীল এবং তাদের সঙ্গ আনন্দদায়ক। কিন্তু মাঝে মধ্যে তারা রামগরুরের ছানা (হাসতে তাদের মানা) হয়ে উঠতে পারে। আদেশ মানতে চরম অনিচ্ছুক হয়ে ওঠে। তুলা জাতকেরা খুবই বুদ্ধিমান। একই সাথে, তারা চরমভাবে সরল।

সহজেই অন্যের প্রতারণার শিকার হয়। তারা কথা বলে আপনার কান পাঁকিয়ে ফেলবে। কিন্তু একই সাথে তারা আপনার খুব ভালো শ্রোতাও হবে। তুলারা অস্খির প্রকৃতির মানুষ। কিন্তু কোন কাজে কদাচিৎ তারা তাড়াহুড়ো করে। আপনি পুরোপুরি বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন? আপনি শুধু একা নন। এই রাশির কার্যকলাপ, বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এতো হতাশাব্যঞ্জক অসামঞ্জস্য কিংবা ধারাবাহিক স্খিরতার অভাব রয়েছে যে অন্য মানুষতো বটেই, তারা নিজেরাও একেক সময় নিজেদের আচরণে অবাক হয়ে যায়।

অনেক মানুষই আপনাকে বলবে যে তুলা হলো ভালোবাসা, সৌন্দর্য, মিষ্টতা, আলোর রাশি। সেটা ভালো, যতক্ষণ এভাবে চলছে। কিন্তু গন্তব্যে পৌছাবার আগেই থেমে যাওয়া তার অভ্যাস। ইউজেন ও'নেইল (১৯৩৬ সনে নোবেল বিজয়ী আমেরিকান নাট্যকার) এর বর্ণিত একটা সভ্য দূরত্বও পৌছে কিনা সেটাও সন্দেহ। তুলাদের প্রতীকটি একটা সুবিচারের স্বর্ণের নির্মিত পাল্লা বলেই ভেবে নেবেন না যে তারা নিজেরাও সবসময় স্খির ভারসাম্য অবস্খায় রয়েছে। এটা হয়তো মনে হবে যে একটা যৌক্তিক অনুমান। অবশ্য পাল্লার কাজই হলো ভারসাম্য রক্ষা করা। আপনি কি পুরোনো ফার্মাসিউটিক্যাল পাল্লাগুলোতে মাপা-মাপির দৃশ্য দেখেছেন? সেগুলোর আসল উদ্দেশ্য হলো পাল্লাটার দুপাশকে ভারসাম্য দেয়া। কিন্তু আসলে কী ঘটে? একবার একপাশে কম হয়, তো আরেকবার অন্য পাশে কম হয়। এই কম বেশি করে করে অবশেষে ভারসাম্য আসে। বন্ধুভাবাপন্ন কোন প্রতিবেশীর ফার্মেসিতে গিয়ে এই মাপামাপির দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারেন। (ওষুধ বিক্রেতাকে শুধু বলুন যে কীভাবে দুপাশ সমান করা সম্ভব সেটাই আপনি দেখতে চান।)

শান্ত, নিখুঁতভাবে অবিচল, মনোরম, মহৎ এবং চমৎকার ব্যক্তিত্বেও এই চমৎকার সমন্বয় তুলা জাতকের মধ্যেও আরেকবার পাবেন কি না কে জানে। তুলা জাতকের ব্যক্তিত্বের মধ্যে এরকম একটা সমন্বয় আপনি  পাবেন ঠিকই, কিন্তু সেটা দিনের অর্ধেকটার জন্যে। কিন্তু দিনের বাকি অর্ধেকটা সময় সে বিরক্তিকর, ঝগড়াটে, জিদি, অস্খির, হতাশ, এবং বিভ্রান্ত হয়ে থাকবে। আবার হঠাৎ করেই, দাড়ি-পাল্লার অভ্রান্ত ভারসাম্যের মতোই সেও তার ভারসাম্য অর্জন করবে। এটা যেন স্বর্গীয়। কিন্তু এই স্বর্গীয় ভারসাম্য আসার আগে ঐ কম-বেশির ব্যাপারটা থাকবেই।

এদের বাহ্যিক চেহারা দেখে চিনতে হলে ততটুকুই মনোযোগ দরকার যতটুকু তার ব্যক্তিত্বকে বুঝতে হলে দরকার। তুলা জাতকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য বলে বস্তুত তেমন কিছু নেই, যদি না এটা ভেনাস ডিম্পল হয়।

তুলাদের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রায় সবসময়ই একইরকম এবং সুসাম্য বজায় থাকে। তারা আনন্দদায়ক, কিন্তু তেমন লক্ষ্যণীয় নয়। তাই বরং গালের টোল দিয়েই শুরু করলে সুবিধা হবে। গালে দুটি অথবা থুতনিতে একটা টোল থাকতে পারে। যদি মুখে কোন টোল না পান তাহলে তাদের হাঁটু অনাবৃত করে দেখতে চাইলে দেখতে পারেন সেখানে পান কি না। অনেক তুলা জাতকের হাঁটুতেই টোল থাকতে পারে। কিন্তু এসব ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করুন। “আমি শুধু এইটুকু পরীক্ষা করতে চাই যে তুমি অক্টোবরে জন্মিয়েছো কি না” - এই কথা বলে আপনি যদি হাঁটু দেখতে চান, তাহলে খুব কম সংখ্যক মেয়েই আপনাকে বিশ্বাস করবে।

পুরুষদের পাজামা উঠিয়ে দেখতে চাইলে আপনি সূত্রটার সত্যতা পাবেন - অবশ্য সমুদ্রসৈকতে কিংবা টেনিস খেলার সময় পাজামা উঠাবার প্রয়োজন পড়বে না। টোল পাবার পর যদি জানতে পারেন যে, ব্যক্তিটি অক্টোবরে জন্ম নেয় নি তাহলে আশাহত হবেন না। তুলার প্রভাব থাকলে টোলগুলো ওসব স্খানে থাকবে এটাই নিয়ম, সুতরাং আপনার ধারণা এখনও সঠিক।

ভেনাস ডিম্পল, বা টোলের খোঁজাখুঁজি শেষ হলে এবার তার মুখমণ্ডলটা লক্ষ্য করে দেখুন। সবসময়ই একটা লক্ষণীয়ভাবে সুখাবহ অভিব্যক্তি তার মুখমণ্ডলে লেগে থাকে। এমনকি যখন তুলা জাতক রাগান্বিত থাকে তখনও কোন না কোনভাবে তারা মুখের অভিব্যক্তিতে একটা ভদ্র কিংবা ন্যূনতমভাবে নিরপেক্ষ ভাব ধরে রাখে। শুক্রদের কণ্ঠস্বর সাধারণত মিষ্টি এবং কলিং বেলের মতোই পরিষ্কার। এই মানুষগুলো সাধারণত নিজেদের কণ্ঠস্বরকে কর্কশ কিংবা তীক্ষî করে তোলে না। সমগ্র পৃথিবীতে তুলা জাতকই সেই একমাত্র ব্যক্তি যে বলবে, “আমি তোমাকে ঘৃণা করি, এবং এখন তোমার নাকে একটা ঘুষি মারবো,” অথচ তার কণ্ঠস্বর শুনে মনে হবে সে যেন মহাদেব সাহার কবিতা আবৃত্তি করে বলছে, “কীভাবে তোমায় আমি ভালোবাসবো?” তার মুখটা হয়তো সামনে ঝুঁকে থাকা, আর তাদের ঠোঁটের বর্ণনা হয়তো গিবসনের ‘গার্ল ডেইজ’-এ বর্ণিত আছে এভাবে, “ঠোঁট যেন চেরী ফলের তৈরি মদের মতো।” বস্তুত, তুলার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন জাতকের মুখ দেখলে আপনার ক্রিসমাসের খুব রঙ-চঙে বৈচিত্র্যময় আনন্দোউজ্জ্বল উপহারের বাক্সগুলোর কথা মনে পড়বে। কিংবা মিষ্টি বিস্কুটের কথা মনে পড়বে। তাদের কাউকে কাউকে দেখলে মনে হবে তারা যেন মানুষরূপী ললিপপ, কিংবা ক্রিমে ভরপুর ক্যারামেল  সানডি। তারা এইগুলো খেতেও পছন্দ করে, আর যদি এমন হয় যে একজন তুলা জাতকই এটা এখন এটা পড়ছেন, তাহলে হয়তো ইতিমধ্যে তার ক্ষুধাও লেগে গেছে।

জাতিকারা প্রায় সবসময়ই কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই সুন্দর হয়, আর পুরুষরা সাধারণত হ্যান্ডসাম। তাই বলে, পৃথিবীর সব সুন্দর মানুষগুলোই যে তুলা জাতক কিংবা জাতিকা তা নয়। শুক্রের সৌন্দর্যের একটা নির্দিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য রাশির সৌন্দর্য থেকে এটাকে সবসময় পৃথক করা সহজ ব্যাপার নয়। তাদেরকে চিনতে পারার যে গোপন কৌশলটা আমার আছে সেটা হলো, আমি ডুয়াইট আইসেনহাওয়ার এবং ব্রিজেট বার্দোর মিষ্টি অভিব্যক্তিটাকে তুলাসুলভ বলে স্খির করে নিয়ে তারপর অন্যদের অভিব্যক্তি মিলিয়ে দেখি। কিন্তু সমস্যাটা হলো কখনও কখনও পুরুষগুলোকেই লাগে বার্দোর মতো আর মহিলাদেরকেই দেখায় ডুয়াইটের মতো। আপনারও এরকম পরিস্খিতির জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আমি এমন বলছি না যে, তুলাজাতিকাদের চেহারা পুরুষালী। একজন গড়পড়তা পুরুষ যতটুকু মেয়েলীত্ব প্রত্যাশা করে, কিংবা সহ্য করতে পারে তারা ঠিক ততটুকুই মেয়েলী (যদি না তাদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভাবের প্রভাব থেকে থাকে।) আর নিশ্চিতভাবেই আমি এটাও বলছি না যে তুলা পুরুষেরা মেয়েলী। বরং তারা সাধারণত পৌরুষদীপ্ত পুরুষ জানোয়ার। কিন্তু এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে তাদের মধ্যে এমন কিছু খাঁটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো তাদেরকে বক্সার কিংবা কুস্তিগীরদের থেকে সহজেই স্বতন্ত্র করে দেয়। এমনকি যে দুর্লভ তুলাজাতককে আপনার কুৎসিত মনে হবে, যদিও এরকম একজন তুলাজাতক খুঁজে পাওয়া মুশকিল, তার অভিব্যক্তিতেও এমন একটা চমৎকারিত্ব থাকবে যেটা আপনাকে এই বিশ্বাস দিয়ে যাবে যে সে খুবই সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

আপনি কোন তুলাজাতককেই খুঁজে পাবেন না যার হাসিটা এক টুকরো নরম সাদা মেঘের মতো সুশ্রী নয়। শুক্রের হাসি শক্ত একটা চকলেটকেও নিমেষে গলিয়ে দিতে পারে। আর যখন এই হাসি আপনার উপর পূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে তখন একদম বদখত মুখটিকেও আপনার চমৎকার সুন্দর বলে মনে হবে। কথাটা ভাবার্থবোধে নেবেন আক্ষরিক অর্থে নয়।

অধিকাংশ তুলা জাতক জাতিকার শরীরেই চমৎকার বাঁক রয়েছে, তাই বলে কোণ আবার নেই। তাদের চুল প্রায়ই হয় কোকড়া। তারা যে মোটা হবে এমন কোন কথা নেই (কিন্তু বৃষের প্রভাব থাকলে তারা যে ছোট খাট হাতি হয়ে উঠবে না এমনটি বলা যায় না)। কিন্তু তারপরও, ভালো ডায়েট করে একটা ভালো শরীরের অধিকারী হয়ে উঠে আপনাকে বোকা বানাতে তাদের বেশিদিন লাগবে না। এবং তারপরও তার শরীরে আওয়ারগ্লাসের মতো ঢেউখেলানো বাঁকগুলো থাকবে। আবার বার্দোতের উদাহরণ টেনে আনা যায়। কেউ যে তাকে মোটা বলতে পারবে না সেটা নিশ্চিত, কিন্তু কেউ কি তাকে চিকন বলতে পারবে? শুক্র জাতক জাতিকাদের চেহারা এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবার আরেকটি কৌশল রয়েছে। তাদের ঝলমলে হাসির মধ্যে একটা উচ্ছ্বল রিমঝিম সুরের আবেশ পাবেন। একবার শুনলে, সে শব্দ দ্রুত ভুলে যাওয়া আপনার জন্যে কঠিন হবে।

এখন আপনি হয়তো ভাবছেন, সুন্দর হয়ে জন্ম নেয়া, গালে টোল পড়া, সৌন্দর্য এবং আকর্ষণীয় হয়ে উঠার প্রতি আগ্রহ থাকা, মানুষকে আনন্দ দেবার প্রতি সচেষ্ট থাকা এবং নিজের মধ্যেও আনন্দ নেবার অনুরাগ থাকা, এসবই আশীর্বাদ। আপনি হয়তো ভাবছেন যে ভদ্রতা, বুদ্ধিমত্তা, সাবলীলতা এবং অনুধাবনের ক্ষমতাগুলো কোন পরীর দাদুর উপহার। আপনার ধারণা সত্যও হতে পারে। তুলা রাশির পাল্লাটায় যখন ভারসাম্য থাকবে তখন এসব মানুষগুলোর সাথে দেখা হলে মনে হবে যেন একজন স্বর্গীয় পরীর সাথে দেখা হয়েছে, এবং এই অনুভব সত্যই খুব আনন্দদায়ক। কিন্তু সমস্যাটা হলো সেই পরী দাদীমা। দাদু তার জাদুর লাঠি দিয়ে একবার স্কেলের একপাশে নাড়া দেয়, আরেকবার আরেকপাশে। এদিকে জাতক জাতিকাদের মন মেজাজ সেভাবেই বদলাতে থাকে। দাদী সম্ভবত তার মনটাকে ঠিক করে উঠতে পারছেন না যে ঠিক কোন পাশটাতে বেশি ওজন দেবেন, আর তাই এটা জাতক জাতিকাদের উপরই তিনি ছেড়ে দিয়েছেন।

প্রথমে তারা কথার ঝড় বইয়ে দেবে, এবং একাই কথা বলে পুরো আলোচনাটা মুখর করে রাখবে। প্রশংসনীয় আগ্রহের সাথে শ্রোতারাও মনোযোগ দিয়ে শুনবে। অন্যরা যখন কলহ করবে, তখন তারা শান্তির দূতের মতো তাদের রাগে খাড়া চুলগুলোকে নম্র করে তুলবে। এরপর তারা ঘুরে দাঁড়াবে। স্বেচ্ছায় আলোচনার অন্য দিকটাতে চলে যাবে। এবং শুধুমাত্র বিতর্কের সাধ নেবার খাতিরেই বিতর্ক শুরু করবে। তারা ছন্দময়তা পছন্দ করে। কিন্তু, অনেক তুলা জাতকই প্রচুর খাবার খেতে, কিংবা বারংবার প্রেমে পড়তে কিংবা বিস্কিটের পুরো টিনটাই খালি করে দিতে পছন্দ করে। বলাই বাহুল্য ছন্দপতনেও কোন কমতি নেই তাদের।

বস্তুত, কিছু কিছু তুলা ব্যক্তিত্বের সাথে আপনার দেখা হতে পারে যারা আপনাকে ড. ডুলিটল-এর “ধাক্কা দাও যাতে ঠেলা খাও” পশুটির কথা মনে করিয়ে দেবে।

এই রাশির আরেকটি সুনাম আছে - অলস তুলা। এটাও তাদের মধ্যে একটা অসঙ্গতি। দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ এবং মাসব্যাপী তারা পূর্ণ সক্রিয়তার মধ্যে ডুবে থাকতে পারে। রাত জেগে চরম পরিশ্রম করেও ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুনবে মোরগের ডাক। তার এহেন ব্যস্ততা দেখেই আপনি ক্লান্ত হয়ে উঠতে পারেন। হঠাৎ, ধপ করে চেয়ারে বসে পড়বে, এবং বলবে “আমি খুব ক্লান্ত।” এবং আপনি এমন অলসতার নিদর্শন তখন দেখবেন যেটা আপনি এর আগে দেখেননি (অন্তত এরকম উদ্দীপিত সক্রিয়তার পরে তো নয়ই)। একবার তারা ওভাবে বসে পড়ার পর তাদেরকে এক চুল নড়তেও দেখবেন না আপনি। আশেপাশে কেউ যদি থাকে তাকে একটু নড়ে চড়ে বসতে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে, তাহলে সে আগ্রহী ব্যক্তিটিকে বরং অপেক্ষা করতে বলবে। অলসতার দিকে পাল্লা ঝুঁকে পড়লে তুলাকে বুলডোজার দিয়ে ঠেলেও নড়ানো যাবে না। সে কথা বলবে, পড়বে, হাই তুলবে, নাক ডাকবে, টিভি দেখবে, জানালা দিকে এক নজরে বাইরে তাকিয়ে থাকবে, এবং মনে হবে বেডরুমে যাওয়াটা তার পক্ষে হয়তো সম্ভব হবে না (কিন্তু সে যেতে সক্ষম হবে)। কানের কাছে হাজার ভ্যাজর ভ্যাজর করে কিংবা চিৎকার চেচামেচি করেও তাকে প্রভাবিত করা সম্ভব হবে না। মনে হবে সে যেন অন্য দুনিয়ায় রয়েছে। একটা সময় পর পাল্লা যখন আবার সক্রিয়তার দিকে ঝুঁকে পড়বে, অমনি সে পূর্ণ উদ্যমে ঝাপিয়ে পড়বে। তার নাক তীক্ষî হয়ে উঠবে এবং তার হাত পায়ে রীতিমতো পাখা গেিজয়ে যাবে। নিত্য কর্মরত খচ্চর (কলুর বলদ) -এর মতো সর্বক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকবে, এবং অলৌকিকভাবে ভারসাম্য বজায় রেখে, শান্ত স্খির, আরামদায়ক দক্ষতার সাথে সে কাজ করে যাবে। যদিও তুলা কোন দ্বৈততার রাশি নয়, কিন্তু তাদের অনেক বন্ধু বান্ধবেরই বিশ্বাস যে তারা তার মধ্যে দুইটি মানুষকে চেনে। তুলা জাতকের ঊর্ধ্বমুখী অবস্খানের সময় প্রায়ই তাকে দেখেছে এমন একজনকে বলে দেখুন যে তুলা জাতক খুবই অলস - সে আপনাকে ভাবলেশহীন একটা দৃষ্টি দেবে। আবার উল্টোভাবে, যে তুলা জাতকের অলসতাময় দিনগুলোতে পাশে ছিলো তাকে বলে দেখুন যে তুলা জাতক খুবই পরিশ্রমী মানুষ, সে আপনাকে উত্তর দেবে, “ঐ ভবঘুরে অলসটার কথা বলছেন? আপনি বোধহয় ঠাট্টা করছেন।”

তুলারা প্রবৃত্তিগতভাবেই জানে যে, শরীরের ছন্দময়তা ফিরিয়ে আনতে প্রতিবার সক্রিয় ব্যস্ততার পর, পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেয়াও জরুরি। তাদের নিজস্ব কোষ বিন্যাস, জিন এবং পাল্স  তাদের কাছ থেকে এটাই দাবি করে। এবং নিজেদের শারীরিক সঙ্গতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তারা বেশ দক্ষ। কিন্তু আবেগ এবং মনের সঙ্গতি রক্ষায় তারা তেমন দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেনি। আবেগের আতিশয্যে ফুপিয়ে কেঁদে উঠবে, তারপর হঠাৎ করেই তীব্রভাবে বিদ্রূপাত্মক হয়ে উঠবে। কিন্তু তারপর, বসন্তের রবিন পাখির মতোই উৎফুল্ল এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। এটা কোনভাবেই মিথুনের দ্বৈততার অনুরূপ কোনকিছু নয়।

তুলারা অনবরত একরকম মেজাজ থেকে অন্যরকম হয়ে ওঠে, এবং আবার পুরোনো মেজাজ তাদের মধ্যে ফিরে আসে। কিন্তু এটা মিথুনের একদম বিপরীতমুখী বদলে যাওয়ার মতো কিছু নয়। তুলাদের আবেগের মধ্যে একধরনের গভীর আভিজাত্য রয়েছে। কোন একটা বিশেষ মুহূর্তে তাদের মেজাজ যেমনই হোক না কেন, সুখ-দু:খ ইত্যাদি আবেগগুলোর ব্যাপারে তাদের একটা দার্শনিক মনোভাব কাজ করে। ফলত সময়মতো সবকিছু ঠিক করে নেয়ার ক্ষেত্রে তারা তেমন একটা ব্যর্থ হয় না।

প্রবৃত্তিগতভাবেই তুলা জাতক জাতিকা বিবেক বুদ্ধির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এটা তাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্বাস্খ্য নিশ্চিত করে। সাধারণত মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়াই হোক কিংবা শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পড়াই হোক - দুটোই তারা এড়াতে সক্ষম হয়। তাদের জন্যে সবচে বড় হুমকি হলো কোনকিছু অতিরিক্ত করা, বা খাওয়া। মিষ্টি খেলে মেদ জমার, পেট খারাপ হবার এবং ত্বকের সৌন্দর্যহানী অনেকাংশে থাকে। প্রচুর পরিমাণে মদ সেবন করলে তাদের কিডনি এবং ব্ল্যাডারে সমস্যা হয়। যেটা পরবর্তীতে মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। হতাশাগ্রস্ত হয়ে উঠলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তাদের ত্বকে চুলকানি এবং ফোস্কা পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাদের শরীরে বুক হলো সংবেদনশীল স্খান। কখনও কখনও তারা পাকস্খলি ও পায়ের সমস্যায় ভুগে থাকে। যদিও এই সমস্যাগুলো তাদের ক্ষেত্রে ততো বেশি বিপদজনক নয়। অনেক তুলা জাতকেরই আলসারের সমস্যা দেখা যায়। তবে এটা তার দু:শ্চিন্তার দরুন যতোটা না হয়, তার থেকে বেশি হয় ইচ্ছামতো চেয়ে খাওয়া দাওয়া এবং অসঙ্গতিপূর্ণ আবেগের কারণে। সাধারণত তুলা জাতক জাতিকারা অধিকাংশ মানুষের বেশি স্বাস্খ্যবান হতে সক্ষম হয়, যদি না নিজের উপর তারা বেশি চাপ প্রয়োগ করে, এবং প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে ভুলে না যায়। শান্তি এবং সঙ্গতিপূর্ণতার যোগ শুক্র জাতকদের শরীরের উপর অলৌকিক প্রভাব রাখতে সক্ষম। অসুস্খ অবস্খায় তাদের প্রয়োজন অখণ্ড বিশ্রাম, আনন্দদায়ক বই, হালকা সঙ্গীত এবং শান্তি দেবার মতো কথাবার্তা, কিন্তু আবেগের অসঙ্গতি মোটেও নয়। এরকম পরিবেশ পেলে তুলা জাতকেরা দ্রুত সেরে উঠতে মোটেও ব্যর্থ হয় না।

তুলাদের চরিত্র তৈরি হয়েছে দয়া, ভদ্রতা, নিরপেক্ষতা, ভদ্র গালি-গালাজ, বিতর্কপ্রিয়তা, পরাজয় স্বীকার না করার প্রতি তীব্র জিদ, দার্শনিক যুক্তি এবং সিদ্ধান্তহীনতার সমান সমন্বয়ে। এই প্রতিটি উপাদানের বিশদ আলোচনা করলে ভালো হয়।

বিতর্কপ্রিয়তার কথাই বলা যাক। আপনার ঘড়ি যদি দুই সেকেন্ড þেöা হয় তাহলে তুলা জাতকটি আপনার সাথে এখন কটা বাজে সেটা নিয়ে তর্ক শুরু করে দেবে। “কিশোর কিশোরীরাই দেশটাকে নষ্ট করছে।” - তার কাছে এ ধরনের কথা বলে পার পেয়ে যাবার প্রত্যাশা করা আপনার ভুল হবে। সে আপনাকে যৌক্তিকভাবে, এবং সতর্কতার সাথে কতজন কিশোর কিশোরী শান্তিরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হয়ে কাজ করছে তার একটি পরিষ্কার পরিসংখ্যান দিয়ে দেবে। যদিও তার নিজের সন্তানরা হয়তো অবাধ্য এবং তারা স্কুলে ড্রপ করে বসে আছে। এ ধরনের একটা মন্তব্য করুন যে, “এখন আইন এতই দুর্নীতিগ্রস্ত যে প্রত্যেক আইনজীবী এবং বিচারকই অসৎ।”

সে আপনাকে ঘন্টা ধরে দেশে বিদ্যমান আইনের নিরাপত্তা বিধায়ক মহৎ উদ্যোগগুলোর বর্ণনা করবে। জুরি পদ্ধতির গুণাগুণ বিশ্লেষণ করতে করতে আইনপ্রণেতাদের সমস্যারও ব্যাখ্যা করবে। বর্ণনার এক পর্যায়ে সে হয়তো রোমান আইনপদ্ধতি থেকে শুরু করে কোড নেপোলিয়ানেও চলে যাবে। কখনই খাপছাড়াভাবে বলবেন না যে, “গ্রামে থাকার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শহরে থাকাটা নিতান্তই বোকামী। কোন তুলনাই চলে না।” বিশেষ করে শেষোক্ত বাক্যটিই সবচে বড় ভুল হয়ে গেল। তুলা জাতকদের সমুখে শুধু ‘তুলনা’ শব্দটি উচ্চারণ করে দেখুন তারা ক্ষেপে উঠে লেগে যাবে বিতর্কে। সারা রাত ধরে সে তুলনা করে চলতে পারবে, অবশ্য মাঝে মধ্যে একটু বিরতি এবং খাওয়া দাওয়ার পর্ব থাকতে পারে। সে শহরের সৌন্দর্য এবং উপকারিতাগুলোকে গ্রামের সাথে তুলনা করবে। সে নিজেও যদি উপশহরে বসবাস করে তবুও শব্দের মাধুর্য মিশিয়ে ট্যাক্সির হর্ণ, উজ্জ্বল ঝলমলে আলো, থিয়েটার, মিউজিয়াম এবং পার্ক ইত্যাদির বর্ণনা করবে। আপনার হয়তো ইচ্ছে হবে তাকে ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে। কিন্তু আপনি যদি ঠিক উল্টো প্রস্তাবটাও রাখতেন তাতেও কোন কাজ হতো না। সেক্ষেত্রে তুলা জাতকটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতার বৃদ্ধি এবং গ্রামে থাকবার আনন্দকেও একই শব্দমাধুর্য দিয়ে বর্ণনা করে দিতো। একটি ভালো বিতর্কের বিষয়ে যতক্ষণ আপনি তার বিপক্ষে থাকছেন ততক্ষণ সে বিষয়টিকে সমর্থন করছে, না অসমর্থন করছে সেটা তার কাছে কোন ব্যাপার নয়। অনেকসময়, যদি সে বিরক্ত হয়ে ওঠে, তাহলে বিতর্কের মাঝেই হঠাৎ সে পক্ষ পরিবর্তন করে বসতে পারে। তাকে আপনি বলে দেখুন যে আপনি একটি ছবি পছন্দ করেন, অমনি সে আপনাকে ছবিটার ভুলগুলো দেখিয়ে দেবে। আপনি ছবিটির সমালোচনা করে দেখুন, সে ছবিটির প্রশংসা করবে। কোন নতুন বই সম্পর্কে উচ্ছসিত প্রশংসা করে দেখুন, সে বইটির মন্দ দিকগুলো তুলে ধরবে। যদি বইটি আপনার কাছে তেমন আকর্ষণীয় মনে না হয়, তাহলে সে এটার ভাল দিকগুলো আপনাকে দেখিয়ে দেবে। তার এই যৌক্তিক বিয়োজনের ধারাবাহিকতায় সে অবশ্য নিরপেক্ষই থাকবে। তুলা জাতক জাতিকা সংস্কারদুষ্টতা, কপট অভিযোগ এবং অন্ধভক্তিকে সমানভাবে ঘৃণা করে এবং ভয় পায়। সে আসলে প্রকৃত সত্যকে খুঁজতে চায়। সে চায় সেই নিখুঁত ভারসাম্য যেটা তাকে সঠিক উত্তরটা দিতে সক্ষম। এ জন্যে সে সবগুলো সম্ভাবনাকেই মেপে দেখে।

এটা অবশ্যই একটা চমৎকার বৈশিষ্ট্য, কিন্তু এতো সংখ্যক মাপামাপি আবার একজন ইতিবাচক মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে। এবং এটা স্বয়ং তুলাজাতকটিকেও একটি সার্বক্ষণিক সিদ্ধান্তহীনতায় আক্রান্ত করতে পারে। এমনকি শুক্রদের মধ্যে যাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ সবচে বেশি, তারাও সম্ভাবনা যাচাই বাছাই করেই তবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়। হুট করে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কোনকিছুর সত্যতা তাদের সার্বক্ষণিক চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। সাধারণত, কোন কিছু বিচারের ক্ষেত্রে তাদের এই সাম্যতা ও সঙ্গতিপূর্ণতার আগ্রহ তাকে চমৎকার একজন কৌশলবিদ, বা স্ট্রাটেজিস্ট হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম।

তার চিন্তাশীলতায় এমন পরিকল্পনা দাঁড় করানো সম্ভব যেটা দিয়ে যুদ্ধ বাধার আগেই যুদ্ধ জয় করে নেয়া সম্ভব। প্রতিটি দিক বিবেচনা করার তার এই চমৎকার বৈশিষ্ট্য, স্নায়বিক উত্তেজনা প্রশমন এবং ক্রুদ্ধ মেজাজ ঠাণ্ডা করার  গুণগুলো সহজেই তাকে একজন শ্রেষ্ঠ মধ্যস্খতাকারীতে পরিণত করতে সক্ষম। তার মধ্যস্খতায় যেসব মানুষ একে অন্যকে ঘৃণা করে কিংবা অবিশ্বাস করে তাদের মধ্যেও একসাথে কাজ করার সদিচ্ছা জাগিয়ে তোলা সম্ভব। অবশ্য, যুদ্ধ গোপনে তুলা জাতকদের মধ্যে দু:খ এবং হতাশার জন্ম দেয়। তারা রক্তারক্তিকে ঘৃণা করে। রণক্ষেত্রে গোলাগুলি শুরু হয়ে গেলে অক্টোবরে জন্ম নেয়া একজন মিলিটারি অফিসার তার দলের অন্য কাউকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ভার দিয়ে নিজে প্রতিভা দিয়ে তার কৌশলগত তালিকা তৈরি করবে, যেটা হয়তো হাজার হাজার প্রাণ রক্ষা করেও নিজের দলকে জয়ী করবার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

যেসব তুলাজাতকদের জন্মকুষ্ঠিতে মন্দ প্রভাব রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এতো যাচাই বাছাই হয়তো খুবই বিরক্তিকর হয়ে উঠবে। কিছু কিছু এমনও আছে, যারা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে না সকালে ঘুম থেকে বিছানার কোন পাশে জাগ্রত হলে ভালো লাগবে, কিংবা কোন পায়ে জুতোটা আগে পরবে। এমনকি যেসব গড়পড়তা তুলা জাতকদের সাথে আপনার অফিসে কিংবা পার্টিতে দেখা হয়, তাদেরকেও দেখবেন কোন বিষয়ে তারা এটা ওটা বলতেই থাকবে যতক্ষণ না আপনার মধ্যে ক্লান্তি নেমে আসে কিংবা সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌছাবার সুযোগ অনেক আগেই হারিয়ে যায়। তারা বলবে, “আমি যদি এটা করি, তাহলে এই এই ব্যাপারগুলো ঘটবে। আবার অন্যদিকে” (তাদের খুব প্রিয় একটি বাক্যাংশ) “আমি যদি ওটা করি, তাহলে ওটা ওটা ঘটতে পারে।” এবং এই এটা-ওটার পাল্লাটা এতো বেশি এদিক ওদিক করবে যে আপনার মনে হবে সেটা ‘সি’-‘স’।  কোন বিষয়ে একজন তুলাজাতকের মনকে স্খির করার তীব্র চেষ্টার মতো শোচনীয় কিছু বুঝি জগতে আর নেই। সে অবশ্য তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার চেষ্টার মাঝখানে চাপাচাপি বা তাড়াহুড়ো করা পছন্দ করে না। একজন অধীরপ্রকৃতির ব্যক্তি যদি তাকে এই বায়বীয় রাশির জাতকটিকে বেশি জোরাজুরি শুরু করে তো সে এতোটাই জিদ্দি হয়ে উঠবে যে সেটার কাছে এড়ে গরু খ্যাত বৃষের জিদকেও নামমাত্র ছেলেমীর মতো মনে হবে। অধীরতা হলো এমন একটি ব্যাপার যেটা অধিকাংশ তুলা জাতকই সহ্য করতে পারে না। যারা অপরিণামদর্শী, পরিণতির কথা চিন্তা করে না, তারা তুলা জাতকদের মনে বিরক্তি এবং ভয়ের জন্ম দেয়।

এটা মজার যে, তুলা জাতকেরা তাদের সিদ্ধান্তহীনতার কথা সবসময়ই অস্বীকার করে। তুলা রাশির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাখ্যা করার সময়, তারা প্রথমেই যে কথা বলবে সেটা হলো, “আমি মোটেও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি না। একথা ঠিক নয়। নিশ্চিতভাবেই একথা আমার ক্ষেত্রে খাটে না।” আপনার হাসি লুকিয়ে ফেলুন। তার অস্বীকার করার কারণ হলো, যদিও সে সিদ্ধান্ত নিতে খুব বেশি দেরি করে (এবং এই দীর্ঘ সময়ের কথা অতি সহজেই ভুলে যায়), কিন্তু একবার কারণ ও ফলাফল তার বোঝা হয়ে গেলে সে সিদ্ধান্তটা দৃঢ়ভাবে গ্রহণ করে।

পর্যাপ্ত সময় দেয়া হলে অবশেষে যে সিদ্ধান্তটি সে নেয়, সেটা এতোটাই যুক্তিযুক্ত হয় যে সেটা তাকে নিজের সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয় যে, সে দৃঢ় এবং সিদ্ধান্তগ্রহণে পারদর্শী। কিন্তু একই ব্যাপার যেন আপনাকে ভুল ধারণা না দেয়। আবার, যখন সে আপনাকে বলে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে তার কোন সমস্যাই হয় না, তখন বস্তুত সে তুলাসুলভ বিতর্কই শুরু করে। এবং আপনি তাকে এটাই বলতে পারেন। একথা শুনে সে অন্তত এটুকু বুঝতে সমর্থ হবে যে নিজের রাশির বর্ণনার বিপক্ষে তার যে অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো বর্ণনা করতে করতেও সে নিজের সাথে রাশির যোগসাজশটা স্পষ্ট করে তুলছে। যখন নিজের চরিত্রের ব্যাপারে আপনার বিশ্লেষণগুলো সে অস্বীকার করে, তখন আপনি তাকে তৃপ্তভাবে বলুন, “আমি তোমার কাছ থেকে এই আচরণটাই প্রত্যাশা করছিলাম। তুলা জাতকেরা প্রতিটি বিষয়েই বিতর্ক করে।” একথা হয়তো তাকে উন্মত্ত করে তুলবে, কিন্তু একই সাথে নিজের সম্পর্কে সত্যটাও বুঝতে তাকে সাহায্য করবে। তাছাড়া তারা তো সত্যেরই খোঁজ করে। এই কথার মধ্যে লুকানো সত্যটা দেখতে সে বাধ্য। সে নিরপেক্ষ নয় এবং কোন বিষয়ের দুইটি দিক সমানভাবে বিবেচনা করে না - এ কথা তাকে বলা হলে হয়তো সে খুবই মর্মাহত হবে কিন্তু সেটার যথার্থতা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাবে।

খুব কম সংখ্যক তুলা জাতকই খামখেয়ালি হয়। তাদের অধিকাংশই বরং গম ক্ষেতের মতোই ভরপুর মানসিকতা এবং সু-সাম্যের অধিকারী। বাতাসের দোলায় যেমন গমের চারাগুলো একত্রে এদিক ওদিক দোলে তেমনি তাদের মেজাজ-মানসিকতা। সাধারণত যেকোন ব্যবসাসংক্রান্ত চুক্তিতে তারা নির্ভেজালভাবে সৎ এবং তাদের মধ্যে বেপরোয়া ভাব নেই বললেই চলে। তুলা জাতকেরা বরং যথেষ্ট সময় নিয়ে সঠিকভাবে শুরু করবে। কিন্তু শুরুতে গলদ করে পরে আবার সঠিকভাবে শুরু করবার মানুষ তারা নয়। তারা আতিশয্য বা অতিরঞ্জিতভাবে কোন কিছু পছন্দ করে না। কেউ ক্রোধে উন্মত্ত হলে কিংবা আবেগের আতিশয্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারালে তারা পিছু হটে আসে, কিংবা পরিস্খিতি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের পেছনে খুব বেশি লেগে থাকা হলে তারাও এই দুটো চরম অবস্খা সৃষ্টির দোষে দোষী হয়ে ওঠে। অধিকাংশ তুলাই একটা চমৎকার গুণের অধিকারী। তারা খুব সহজেই মনযোগ স্খাপন করতে পারে এবং যেকোন গভীর বিষয়ে চিন্তা করতে পারে।

বইয়ের প্রতি অনুরাগ নিয়েই তারা জন্মেছে, এবং মুদ্রাক্ষরের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা এতো বেশি  যে তাদের অনেকেই নরম মলাটের বই বিরক্তির চোখে দেখে। বইয়ের মলাট শক্ত ও মোটা না হলে, সেটার গন্ধ ও গঠন যদি বইসুলভ না হয় তাহলে তারা সেটাকে বই বলে মানতেই রাজী নয়। প্রতিটি তুলার বাসাতেই একটা বড় আকারের লাইব্রেরি খুঁজে পাবেন সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।

শব্দের ছন্দময়তা, কবিতা এবং শব্দের যথার্থ ব্যবহার সেটা লেখাতেই হোক কিংবা কথাতে - তারা ভালোবাসে। এরকম খুব কম ঘটে যে শিল্পের কমনীয়তা তাদের আকর্ষণ করে না। সেই পরী দাদু যখন পাল্লাটার একপাশে টানাটানি করে, তখন তুলা জাতক যে ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হোক না কেন, যা কিছু ভালো এবং পরিচ্ছন্ন সবই তার হৃদয়ের গভীরে দাগ কাটে। এবং তারা সেসব উপভোগ করে। বুকের ভেতর তার হৃদয়টা একজন শিল্পীর। পার্টিতে কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সে শুক্রের হালকা নীল আর প্যাস্টেল রঙ ছড়িয়ে রঙিন করে তোলে। মৃদু আলো, হালকা এবং সুরময় সঙ্গীত, মজার কথোপকথন, ভালো খাবার তাকে উজ্জীবিত করে তোলে। তার মস্তিষ্ক হীরার মতোই উজ্জ্বল এবং ওপালের মতোই মসৃণ। বাতাসের উপাদানগুলো পরিবর্তনের মতোই তার গতিময়তা। তার জন্যে যে পদার্থটি উপকারী সেটা হলো কপার। সম্মান সম্বন্ধে তার গভীর চেতনা, এবং তার সতর্ক যৌক্তিকতার মাঝে একধরনের ঠাণ্ডা সজীবতা বয়ে যায়। আর শুক্র থেকে ছয় মাত্রার শান্তি এসে প্রবাহিত হয় তার মনোজগতে।

তুলাকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে আপনাকে পাল্লার ধাঁধাটা আগে বুঝতে হবে; একটা পাল্লায় ভরে আছে অক্টোবরের বৈচিত্র্যময় উজ্জ্বলতা, স্বর্ণালী পাতার þতূপ, যেন শরতের ক্ষণস্খায়ী আবহাওয়ার ছোঁয়া। আরেকটা পাশে জমে আছে এপ্রিলের বৃষ্টিতে সিক্ত লাজুক ভায়োলেট ফুলের আকাশী ডাল-পালার স্নিগ্ধ গন্ধ। যখন পাল্লার এপাশটা নিচু হয় তখন ঝলমলে আশাবাদ নিমজ্জিত হয় নির্বাক ভয়ে। একাকীত্বের হতাশায় হয়ে যায় নিমগ্ন। যখন পাল্লার দুপাশে সাম্য আসে তখন তার উর্বর, এবং প্রগলভ বুদ্ধিমত্তা আর তার প্রণয়কাতর, সহানুভূতিশীল হৃদয়ের মধ্যে একটা চমৎকার সঙ্গীত এসে বাসা বাধে তার বুকে। ঋতুগুলো তুলা রাশির গোপনীয়তা পুষে রাখে। শীতকাল তাদের জন্যে একটু বেশিই শীতল। গ্রীষ্ম তার জন্যে একটু বেশি গরম। এগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য ঘটিয়ে নিখুঁত একটি বসন্ত কিংবা হেমন্তই তাকে শান্তি দিতে পারে।

No comments:

Post a Comment