Saturday, June 2, 2012

মীন(১৯ ফেব্রু - ২০ মার্চ):সাধারন বৈশিষ্ট্য

কীভাবে চিনবেন

আপনি যদি কোন মীনকে ভোট গুণতে দেখেন কিংবা ব্যাংক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের ডেস্কের পেছনে বসে থাকতে দেখেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি দুর্লভ সেই মাছটিকেই দেখেছেন। একটা স্খানে অনেক সময় ধরে বসে থাকার বাধ্য-বাধকতা অধিকাংশ মীনই সইতে পারে না। আধ্যাতিক উন্নয়ন সাধনের আখড়া, আর্ট গ্যালারি, মসজিদ কিংবা মন্দিরে তার খোঁজে গেলে তাকে পাবার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। কনসার্ট কিংবা নাইটক্লাবেও তাকে পেতে পারেন। লেখকদের আলোচনা সভায়, নাট্য মঞ্চের পেছনে কিংবা কোন ইয়টে রৌদ্রস্নানরত অবস্খায়ও তাকে পেতে পারেন।

এরকম স্রোতময় জীবনের গতিতে তাকে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। যতো বেশি শৈল্পিক এবং সৃষ্টিশীল পরিবেশ হবে, এবং যতো বেশি অবসর এবং দুর্বোধ্য পরিবেশ হবে ততো বেশি মীনকে আপনি তেমন স্খানে খুঁজে পাবেন। ককটেইল পার্টিতে কিংবা কোন আনন্দ উৎসবে আপনার জাল রঙিন ও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠবে বিচিত্র আর ঝলমলে সব মীন অর্থাৎ মাছে। আপনার জালে কিছু বিখ্যাত নারী মীনও ধরা পরতে পারে।



নেপচুন-শাসিত মানুষগুলোর মধ্যে পার্থিব আকাáক্ষা তেমন একটা নেই। তাদের অধিকাংশের মধ্যেই পদবী, ক্ষমতা, নেতৃত্ব বা ধন-সম্পদের প্রতি তেমন কোন আগ্রহ দেখতে পাবেন না। বিয়ের সূত্রে কিংবা উত্তরাধিকার সুত্রে না পেলে মীনদের মধ্যে কাড়ি কাড়ি টাকাওয়ালা মানুষ তেমন একটা নেই। তাই বলে টাকার বিরুদ্ধে তাদের কোন ক্ষোভ নেই। যেসব পুরোনো কয়েন আপনি আর ব্যবহার করেন না সেগুলো সে আনন্দ সহকারে গ্রহণ করবে। কিন্তু আমাদের আর সবার চেয়ে ধন সম্পদের ক্ষণস্খায়িত্বের ব্যাপারে তারা অনেক বেশি সচেতন।



“আমি মিলিয়নিয়ার হতে চাই না, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করতে পারলেই যথেষ্ট,” - একথা যেই বলে থাকুক না কেন, এটা যে মীনের জীবনদর্শনকে প্রতিফলিত করে সেটা নিশ্চিত। নেপচুনসুলভ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যে কোন হৃদয় সাধারণত লোভহীন। তাদের মধ্যে তীব্রতার অভাব লক্ষ্য করা যায়, এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে তারা প্রায় পরোয়াহীন। অতীত সম্বন্ধে তাদের মধ্যে চেতনালব্ধ জ্ঞান রয়েছে। বর্তমানকে শান্তচিত্তে মেনে নেবার ক্ষমতা রয়েছে। উপরের স্রোতের সাথে যুদ্ধ করাটা সত্যিকার মাছ কিংবা আমাদের মীন উভয়ের জন্যেই কষ্টকর। তাদের জন্যে অনেক সহজ বরং স্রোত যেদিকে তাদের বয়ে নিয়ে যায় সেদিকেই ভেসে যাওয়া। কিন্তু স্রোতের প্রতিকূলে বা উজানের দিকে যাওয়াটাই মীনদের পথে একমাত্র চ্যালেঞ্জ এবং সত্যিকার শান্তি ও সুখ অর্জনের একমাত্র পন্থা। এই রাশির মানুষগুলোর জন্যে সহজ পথটাই একটা ফাঁদ। বড়শির রুপালি টোপটা তাদের আকৃষ্ট করে, কিন্তু টোপের নিচে যে তীক্ষî হুক রয়েছে সেটা তারা দেখতে পায় না - ফলে নিজেদের জীবনটাকে উচ্ছন্নে দিয়ে দেয়।



মীনদের আচরণ, আর তাদের অলসতাপূর্ণ ভালোমানুষি আপনার খুব ভালো লাগবে। নিজেদের স্বপ্ন এবং জীবন যাপনের ব্যাপারে নিজস্ব অনুভব ও উপলব্ধিগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছাড়া অন্য সব বাধার ব্যাপারেই তারা খুবই নির্লিপ্ত। অপমান, অপবাদ, ঝগড়া-বিবাদ এসব ব্যাপারেও তারা নির্লিপ্ত। একজন মীনকে বলুন যে সমাজটা দুর্নীতি দিয়ে ছেয়ে গেছে, সরকার পতন ঘটছে, বায়ু দুষণের এমনই অবস্খা যে এবার আমাদের বাঁচার আর কোন পথ নেই এবং পৃথিবী ধ্বংসের সম্মুখীন। সে হাই তুলবে, মিষ্টি করে হাসবে এবং দায়সারা গোছের সহানুভূতিশীল একটি দৃষ্টি দেবে।


খুব সামান্য কিছু ব্যাপারই তাদের মধ্যে মারাত্মক ক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে। তাই বলে যে মীন একদম নিরীহ তাও নয়। তারও মেজাজ আছে। কোনভাবে তার রাগ চড়ে গেলে, সে তীব্রভাবে শ্লেষাত্মক, এবং চতুরভাবে বিদ্রুপাত্মক হয়ে উঠতে পারে। বিরক্তিকর মনোভাব এবং ক্রোধাত্মক অনুভূতি জেগে উঠলে নেপচুন­শাসিতরা ঠিকই তার বহি:প্রকাশ করে। তবে মীনের সাধারণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষেরা সাধারণত তেমন একটা বিবাদের মধ্যে যায় না, আর নেপচুনের শান্ত বাতাসও তাদের রাগ, ক্রোধ মুছে দিয়ে যায়। মীনদেরকে তাদের ক্রোধ প্রদর্শনে বাধ্য করা আর একটা পাথরের মতো শান্ত লেকের মাঝে ছুড়ে ফেলা একই রকম ব্যাপার। লেকের জলে সেটা কিছু রিপলের জন্ম দেবে ঠিকই, কিন্তু দ্রুতই সেটা আবার শান্ত আর স্খির হয়ে উঠবে।


মীনদের সাথে সাক্ষাতের প্রথমেই তাদের পা দুটো লক্ষ্য করে দেখুন। সেগুলো লক্ষ্যণীয়ভাবে ছোট এবং সুন্দর হবে (পুরুষদের পায়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)। কিংবা সেগুলো যথেষ্ট লম্বা হবে এবং ঘর-দোর পরিষ্কার করা ক্লান্ত নারীদের মতো ছড়ানো থাকবে। মীনদের হাতগুলোও ছোট, দুর্বল এবং বেশ সুন্দর গঠনের হয়ে থাকে। নয়তো হাতের আকৃতি এতোই বড় হবে যে মনে হবে সেগুলো লাঙল নিয়ে চাষাবাদে অভ্যস্ত। তাদের ত্বক হয় মোলায়েম এবং মসৃণ। তাদের চুলগুলো বেশ সুন্দর, সাধারণত ঢেউ খেলানো এবং হালকা (অবশ্য সাদা চুলধারী মীনদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়)। মীনদের চোখ সবসময় টলমলে, তাদের পাপড়ি ঘন এবং মনে হয় যেন তাদের চোখ দিয়ে অনেক আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। তাদের চোখ সাধারণত গোলাকৃতি এবং খুবই আকর্ষণীয় হয়। কিছু কিছু মীনের চোখতো অপূর্ব সুন্দর। আর কোন শব্দ দিয়ে সে সৌন্দর্য বর্ণনা করা যাবে না। তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তনশীল। তবে বয়সের রেখার থেকে তাদের মুখে টোল থাকার সম্ভাবনাই বেশি। লম্বা আকৃতির মীন জাতক বা জাতিকা খুব বেশি নেই। নেপচুন-শাসিতদের উচ্চতা যেন একটু কমই দেয়া হয়েছে। তবে তাদের গঠনে এতো কমনীয়তা রয়েছে যে, উচ্চতার ব্যাপারটা মনে আসবে না। তারা হাঁটলে মনে হবে যেন তারা ভেসে যাচ্ছে। যেন তারা রুমের ভেতর দিয়ে কিংবা রাস্তা দিয়ে সাঁতার কাটছে। কখনও কখনও সত্যিই তারা সাঁতার কাটে। কিন্তু সাঁতার কাটার জলটা কোথায়? হয়তো কাছে ধারেই কোথাও, আর মাছ জলের প্রতিই আকৃষ্ট।



ঠাণ্ডা পানির প্রতি তার আকর্ষণ থাকতে পারে, দিনে কম করেও বারো কাপ চা কিংবা কফি, অথবা পেপসি বা আরসি কোলা, কিংবা আরও ভারি কোন পানীয়ের প্রতি তার লোভ থাকতে পারে। বৃশ্চিক এবং কর্কটদের মতোই মীন জাতকদের মদ থেকে একশ হাত দূরে থাকবার মতো জ্ঞানটুকু রয়েছে। গুটিকতক মীনই কেবল সামাজিকতা রক্ষায় মদপান করে। তবে পুনরায় তারা এটা ত্যাগও করে। ব্যতিক্রমতো থাকবেই। তবে বিপদে কিংবা দু:শ্চিন্তার সময় অনেক মীনই পানীয়ের প্রতি প্রবল আকর্ষণ অনুভব করে। পানীয় তাদের মধ্যে নিরাপত্তা জাগাতে সক্ষম হবে এই মিথ্যে আশায় তারা পানীয়র প্রতি প্রবল আকর্ষণ অনুভব করে। আর এই আকর্ষণ সত্যিই বিপজ্জনক। অবশ্য প্রতিটি মীন যারা পশি-ক্যাফে (ব্র্যান্ডি জাতীয় পানীয়, খাবারের পর কফির সাথে পরিবেশন করা হয়) পান করে। তারা যে প্রত্যেকেই মদ্যপ হয়ে উঠবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু যারা মদ্যপ হয়ে পড়ে তাদের সংখ্যা যত হওয়া উচিত তার চেয়ে একটু বেশিই বটে।


চোখে রঙিন চশমা পড়ে পৃথিবীটাকে দেখার জন্যেই মীনদের জন্ম হয়েছে। মানবজীবনের নিষ্ঠুর দিকটি তারা ভালোই জানে। সে তাই নিজের তরল, শান্ত পৃথিবীতেই বাস করতে ভালোবাসে যেখানে সবকিছু সুন্দর এবং আনন্দদায়ক। বাস্তবতা রূঢ় হয়ে উঠলে সে বরং তার গোলাপী স্বপ্নগুলোতে মোলায়েম প্রলেপ মেখে ডুবে থাকবে। বৈষয়িক হয়ে ওঠার বিন্দুমাত্র বাসনাও দেখাবে না। জীবন তাকে চরম ব্যর্থতার স্তব্ধ নদীতে ছুড়ে ফেলে দিলে, নিজেকে এই তীব্র বিপদ থেকে মুক্ত করার কোন চেষ্টা না করে সে বরং নিজের ম্লান সবুজ ঘোরের মধ্যে ডুবে যায় যাতে করে কোন বৈষয়িক সিদ্ধান্তে পৌছাবার কষ্টটি তাকে না করতে হয়।


পরিত্যক্ত ও অবহেলিত মীনেরা মিথ্যে আশায় ডুবে থেকে ব্যর্থতার কুৎসিত অন্ধকারকেই মেনে নেয়, যদিও সামান্য বৈষয়িকতাই হয়তো কাল্পনিক সফলতার পরিবর্তে তাদেরকে বাস্তব সফলতা এনে দিতে পারতো।



মার্চে জন্ম নেয়া প্রতিটি ব্যক্তিই যে নেপচুনসুলভ এই ফাঁদটিতে পড়ে তা নয়। কিন্তু এইরকম পরিস্খিতি এড়াতে তাদের যথেষ্ট সচেতনতা ও সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। মীন লেখকেরা হয়তো বার-এ বসে বসে তার বছরের পর বছর নষ্ট করবে আর নিজেকে সান্তনা দেবে যে সে লেখার প্লট জমাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সে অহেতুক সময় নষ্ট করছে আর ঋণ বাড়িয়ে চলেছে। একজন মীন শিল্পী যে যথার্থ মূল্যায়ন বা সহযোগিতা পায় নি, সে হয়তো পার্কে গিয়ে দিনের পর দিন হেঁটে হেঁটে সময় নষ্ট করবে, আর দাড়িতে হাত চালিয়ে নিজেকে বোঝাবে যে সে তার মাস্টার পিসটার জন্যে নৈসর্গকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বস্তুত তার রঙতুলিতে ধুলো জমা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না। তার ক্যানভাসটাতে রঙের বৈচিত্র্য ঢেলে দিতে যে সাহায্যকারী সেই পরীটি কোথায়? আর মীন নারীদের কথা বাদই দিন। নিজেদের বাঁচাবার জন্যে একটা নির্দিষ্ট অংকের আয় থাকলে, মাথার উপর ছাদ থাকলে, আর কাপবোর্ডে কিছু সামুদ্রিক আগাছা জমা থাকলেই এরা নিজেদের রুপালি সকালগুলো কোমলভাবে তাদের অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে, অর্থহীন আশায় সুন্দর ভবিষ্যৎ কল্পনা করে করেই অতিবাহন করে। অভিনেতা, গীতিকার-সুরকার এদের কাহিনীটাও একইভাবে পূর্ণ করে নিতে পারেন।



আপনি হয়তো মীনের প্রতীকটা লক্ষ্য করে থাকবেন। বিপরীত দিকগামী দুটি মাছ। এটা নির্দেশ করে যে নেপচুন দুইটি বিপরীত আকাáক্ষায় বিভক্ত। কিন্তু এটা তেমন নয়। দুই আকাংঙ্খা মিথুনদের কব্জাগত। দুই দিকের দুইটি মাছ দিয়ে বরং বোঝায় যে মীনদের দুইটি পথ রয়েছে: হয় তারা উপরের স্রোতের সাথে যাবে, নতুবা নিচের স্রোতের সাথে যাবে, কিন্তু কোনটাকেই পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারবে না। মীনদেরকে বুঝতে হবে যে মানবজাতিকে তাদের সাহায্য করা উচিত এবং পার্থিব সহায় সম্পত্তির প্রতিও নিজেদের আগ্রহ গড়ে তোলা উচিত। মীন জাতক আইনস্টাইন উপরের স্রোত বেছে নিয়েছিলেন, এবং সময়ের আপেক্ষিকতাকে বর্ণনা করে পৃথিবীর একটি অচেনা রূপ আমাদের মাঝে দিয়ে গিয়েছেন। যেসব মীন নিচের স্রোতে অগ্রসর হয় তারা শেষপর্যন্ত থালা-বাসন ধোয়া আর মাটি কাটার কাজেই নিজেদের মানিয়ে নেয়। তাদের জন্যে সুযোগ সবসময়ই খোলা। কারণ, এরা অস্বাভাবিক প্রতিভার অধিকারী। সমস্যাটা হলো, যদিও এরা দুটো স্রোতের বৈশিষ্ট্যই পরিষ্কার দেখতে পায় এবং বুঝতে পারে কিন্তু সরাসরি সমুখ পথটাই এদের কাছে অস্পষ্ট হয়ে যায়। মীনেরা প্রফেশনাল জীবনে নিজেদের ডুবিয়ে দিয়ে চরম সুখী হয়, নতুবা তারা আরোপিত আবেগ এবং মিথ্যে সুখের মোহাচ্ছন্ন হয়েই জীবন অতিবাহন করে।


সে হয়তো এ মুহূর্তে কান্নবিজড়িত হয়ে উঠবে, আবার পরমুহূর্তে কোন এক অদৃশ্য সুইচ চেপে হয়ে উঠবে আনন্দমুখরিত। মীনদের কাছে প্রকৃত সত্য নয়, যেন সবকিছুই একটা ঘোর। কিন্তু এই ব্যাপারে তারা নিজেরাও পরিষ্কার করে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে না। নেপচুনের বিশাল সাগরের মতোই তাদের অন্তর্নিহিত চরিত্রটা অবোধ্য বা দুর্বোধ্য। আত্মকরুণা এবং আত্ম-প্রেমে ডুবে না গেলে নি:স্বার্থ মীনদের ভেতরে প্রতিটি জীবের প্রতিই ততটুকু ভালোবাসা থাকে যে আপনার মনে হবে তারা মহাপুরুষ। সাধারণত, মীন গৃহিনী হলো তেমন এক ব্যক্তিত্ব যে তার সব প্রতিবেশীর প্রতিই মহানুভবভাবে উদার এবং বিপদে সাহায্যকারী, আবার মীন বারটেন্ডার হলো তেমন একজন যে সমগ্র সপ্তাহ ধরে শত শত মানুষের দু:খ আর দুর্দশার গল্প শুনে ব্যথাতুর হয়ে ওঠে।


গহীন সমুদ্রের স্রোতহীন জল এবং সমুদ্রের উপরিভাগে যেখানে তারাদের ঝলমলে আলো প্রতিফলিত হয় সেখানকার স্রোতের মাঝামাঝি কোন অবস্খানে এই মীনদের বসবাস। বৈষয়িকতা আর পার্থিবতার সাথে সামান্য যেটুকু সম্পর্ক না থাকলেই নয় সেটুকু বজায় রেখে মীনেরা একাকী সেই সত্যের খোঁজেই নিজেদের জীবনকে ঢেলে দেয় যে সত্যগুলোর শাব্দিক কোন ব্যাখ্যা মেলে না। যারা তার বন্ধু হতে চান, কিংবা যারা তাকে ভালোবাসতে চান, তাদেরকে অবশ্যই তার মনের এবং আবেগের সমান্তরালে আসতে হবে। অন্য দুটি জল-রাশি বৃশ্চিক এবং কর্কট অর্ধেক জল আর অর্ধেক ভূমির মাধ্যমে সূচিত হয়। এগুলো পরিস্খিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ায় এবং উভচরতায় বেশ সাবলীল। কিন্তু মীনেরা খোলা বাতাসে শ্বাস নিতে পারে না। তাদেরকে সবসময়ই ঠাণ্ডা সবুজ জলে বসবাস করতে হয়, কখনও বা কর্দমাক্ত জলে, কিন্তু সবসময়ই থাকতে হয় সচল।



লৌহ, পারদ বা স্বর্ণ বা ধাতু কোনকিছু দিয়েই মীনকে সূচিত করা চলে না। তাদেরকে সূচিত করতে হলে প্রয়োজন অবোধ্যতার কম্পন, কৃত্রিম ধাতু, অবাস্তব এবং ঘোরমগ্নতার প্রতিধ্বনী। নিজের প্রতিচ্ছবিটা সে থ্রি-ডায়মেনশনে দেখতে পায়, এ্যামেথিস্ট স্বচ্ছ পাথরের বিকিরণের মতো ঝলমলে আলো আসে তার প্রতিবিম্ব থেকে। তার প্রিয় ফুল হলো জল-পদ্ম এবং শাপলা। ফুলগুলো গোলাপী আর সাদা হয়ে ফুটে ওঠে, এবং সেগুলোর বেশ শক্ত আঁশ এবং পানির নিচ পর্যন্ত শেকড় রয়েছে, যে শেকড় উপরে না ফেলা পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয় না। মীন সমুদ্রের নিচের স্রোতে বিস্মৃতির অতলে হারাবার পথেই যাক, কিংবা হাজার হাজার মাছের ভিড়ে উপরের স্রোত অতিক্রম করে বিশুদ্ধ পানির দেশেই যাক, অল্পকিছু মানুষই কেবল মীনের সাথে তাল মেলাতে পারে। নিজেকে যতটা শক্ত বলে মীনেরা ভাবে তার চেয়ে তারা অনেক বেশি শক্ত। এবং যতোটা জ্ঞানী বলে জানে তার থেকে আরও বেশি তারা জ্ঞানী। কিন্তু যতদিন না তারা সেটা নিজেরাই আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় ততদিন নেপচুন এটা তাদের কাছ থেকে গোপন করে রাখে।


কোন মানুষকে চোর, খুনি, নেশাখোর, দু:শ্চরিত্র, পাপী, মহাপুরুষ, ভণ্ড কিংবা মিথ্যুক বলে বিচার আচার করা তার কর্ম নয়। লোভ, কাম, অলসতা, ঈর্ষাকাতরতা এসব কোনকিছুই নেপচুনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন সাধারণ জাতকের সাহায্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। তার মধ্যে সমবেদনা ও সহানুভূতির ঝরনা বয়ে চলে আর একই সাথে যে কোন বৈষয়িক সাহায্য করার ক্ষেত্রেও সে পিছুপা নয়। প্রতিটি দোষ ও গুণই সে উপলব্ধি করে এবং যেকোন কিছুর খারাপ দিকটিও তার নজর এড়ায় না। এ কারণে অনেক মীনই আধ্যাতিকতাকে বেছে নেয় এবং সে অনুযায়ী তাদের জীবন যাপন করে থাকে।


সাহায্য করাই তার প্রবৃত্তিগত বৈশিষ্টগুলোর মধ্যে প্রথম। কিছু কিছু মীন রয়েছে যারা বেশ খেয়ালি এবং শক্ত মানসিকতার। কিন্তু এটা তাদের একটা ভঙ্গুর খোলসমাত্র। শুধু আত্মরক্ষার জন্যেই এই মুখোশের আশ্রয় করে। মীন নিজেও বুঝতে পারে যে সে কতোখানি নরম এবং প্রতিরোধহীন। পৃথিবী এখনও মীনের উদার মানসিকতার উপযোগী হয়ে ওঠেনি। তাই নিজেকে হাস্যস্পদে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে (এবং নিজের উপার্জনের অবশিষ্টটুকু রক্ষা করতে) অনেক সময় সে নির্লিপ্ততার আবরণ দিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। কিছু মানুষ তার উপর বোঝা দিয়ে তাকে ধ্বংসের সম্মুখীন করে তোলে এবং তাকে নিজের শাশ্বত চরিত্র লুকিয়ে ফেলতে বাধ্য করে। নেপচুনের শীতল স্রোত যেহেতু সবার আনন্দ এবং কষ্ট সমান তীব্রতায় তার মধ্যেও প্রবাহিত করে, তাই বিস্ময়কর নয় যে মীনেরা দু:খের কাহিনী শুনবার প্রতি আগ্রহহীনতার ভান করবে। কিন্তু মনে রাখবেন তারা শুধু ভান করছে। আপনি যদি প্রথমবার ধিকৃত হন, তাহলে আরেকবার চেষ্টা করে দেখুন। দেখবেন সত্যিকার মাছটা ঠিকই ভেসে উঠেছে।



মীনসুলভ অপূর্ব কল্পনাশক্তি, কোমল হাস্যরসাত্মক মনোভাব এবং নেপচুন-শাসিত সৌন্দর্যবোধের চেতনা তাদের মধ্যে চমৎকার, রুচিশীল এবং একই সাথে সর্বকালীন গদ্য কিংবা কবিতা লেখার ক্ষমতা দিয়ে যায়। বস্তুত, তাদের এই শৈল্পিকতা এবং সময়ের প্রতি তাদের গভীর সমবেদনার জন্যেই পৃথিবীটা এখনও চলছে। হয়তো তাদের এই গুণগুলো না থাকলে পৃথিবী আর সূর্যের চারপাশে ঘুরতোই না। আপনি প্রায়ই এরকম মীন খুঁজে পাবেন যারা নিজেদের একান্ত স্বপ্নগুলো বিসর্জন দিয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়গুলো আলোকিত করে বেড়াচ্ছে। কিংবা মঞ্চের সমুখের দর্শকদের মধ্যে হাসি আর কান্নার রোল তুলছে। নিজের ব্যক্তিক জীবনের বিনিময়ে তারা অন্যের জীবনের স্বপ্ন বুনে চলে। তবুও নেপচুন একটি প্ররোচক গ্রহ। নেপচুন এমন বৈশিষ্ট্য এবং আচরণের জন্ম দিতে পারে যে সে বৈশিষ্ট্য একই সাথে দ্বিমুখী, এবং বিপরীত। এটা সত্যকে বিকৃত করে, আর সে প্রভাবে মীনেরা প্রায়ই তাদের সত্যিকার অনুভূতি লুকিয়ে রাখে।



কখনও যদি পলাতক এবং ঝলমলে মীনদের বুঝে উঠবার প্রয়াস পেয়ে থাকেন তবে দেখবেন তাদের মধ্যে মঞ্চ অভিনয়ের প্রতিভা যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে। সরাসরি কোন প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যা’ বা ‘না’ দিয়ে জবাব দিতে তারা ঘৃণা বোধ করে। সে কিছুক্ষণ আগে কোন ছবিটা দেখেছে কিংবা কোন বইটা পড়েছে সেটা জানার কৌতূহল জেগে ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু তার কাছ থেকে যে উত্তরটি পাবেন সেটা হবে অহেতুকভাবে প্যাঁচানো।


এলোমেলোভাবে খাওয়া দাওয়ার স্বভাব তাদের লিভার, হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে। পায়ের পাতায়, হাতে এবং নিতম্বে সমস্যা হতে পারে সেটা দুর্ঘটনাবশতই হোক কিংবা  অস্বাভাবিকতা থাকাতেই হোক। এছাড়া ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর আসা আর নিউমোনিয়ার সমস্যাতেও পড়তে পারে। তাদের ফুসফুস তেমন শক্ত নয়, মার্চে জন্ম নেবার দরুন তাদের পায়ের পাতা এবং গোড়ালি দুর্বল হতে পারে। কোন উঁচু স্খান কিংবা আকা-বাঁকা থেকে পড়ে গিয়ে আহত হবার আশঙ্কা দেখা যায় মীনদের মধ্যে। অন্যথায় তাদের পা খুবই শক্ত এবং সুঠাম আকৃতির হয়। মাঝামাঝি কোন অবস্খা নেই।


তাদের একটা আত্মগত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। নেপচুনের বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো তাদের সুপ্ত শক্তিটাকে আবিষ্কার করা এবং সেটাকে প্রকাশিত হতে সাহায্য করা। মীনেরা নিজেদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী যেকোন বিষয়ে মোহাবিষ্ট হতে পারে এবং সেখান থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারে, সেটা হোক বেড়ালের ভয়, ইদুরের ভয় কিংবা উচ্চতা, সাবওয়ে, লিফট বা মানুষের সান্নিধ্যের ভয়।



তাদের সুপ্ত প্রতিভাগুলোর মধ্যে কৌতুকবোধ একটি। মীনেরা তাদের অশ্রুসজল চোখ লুকাতে সহজেই হেসে উঠতে জানে। তারা প্রহসন করার ওস্তাদ। তাদের কোন ঝলমলে মন্তব্যে আপনি হয়তো চুপসে যাবেন। কিন্তু সেটা তারা এতোই খামখেয়ালীপূর্ণভাবে বলবে যে আপনি সেটার উদ্দেশ্য কিংবা অর্থ কোনটাই ঠাহর করে উঠতে পারবেন না। কিন্তু, একই সাথে নিজের অস্বস্তিটাও যে গাঢ় হয়ে উঠছে সেটাও অস্বীকার করতে পারবেন না। মীনেরা তাদের বিদ্রূপাত্মক বক্তব্য দিয়ে এবং সেগুলোকে একবার স্পষ্ট করে তুলে পরক্ষণেই অস্পষ্টতা দিয়ে প্রহেলিকাময় করে তুলবে যে আপনি তাদের সাথে পেরে উঠবেন না। বাস্তবিকভাবেই সে একজন জোকার। মজার মজার বাক্যগুলো অনায়েসে বলে ফেলবে, এবং একই সাথে নিজের ইলাস্টিকের মতো মুখাভিব্যক্তিতে বিষণíতা এবং দৃঢ়তাও ধরে রাখবে। সূক্ষ্ম কিংবা স্খূল কৌতুক করতে করতে বিদগ্ধতাপূর্ণ ও রুচিশীল কৌতুকের রাজ্যেও সহজেই সে বিচরণ করতে পারে। কখনও কখনও তার কৌতুকগুলো হবে উষä এবং উদ্দেশ্যহীনভাবে নিরীহ। আবার কখনও কখনও সেগুলো হয়ে উঠবে কঠোর এবং নির্দয়। কিন্তু তার প্রতিটি কৌতুকই নিজের কোন একটি অনুভূতি লুকিয়ে রাখবার জন্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৌতুকগুলো মোটেও নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হবে না। মীনেরা হাসিকে নিজের আবরণ করে নেয়, এবং সেটা তাদের যথার্থভাবেই মুখোশ হয়ে ওঠে।



তাদের মধ্যে অসুস্খ এবং দুর্বলদের প্রতি প্রচণ্ড সমব্যথা রয়েছে, এবং তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আগ্রহ রয়েছে। কন্যাদের মতোই সেও তাদের ব্যথায় সমব্যথী হবে। সমাজের কাছে যতই হেয় এবং যতই তাদের পরিস্খিতির প্রতি সমাজ উদাসীন হোক না কেন ভারাক্রান্ত হৃদয়কে বোঝা, বন্ধুহীনতার কষ্ট, ব্যর্থতা এবং বেমানান অবস্খায় আক্রান্ত মানুষকে বুঝে উঠবার প্রতি তারা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। কন্যারা দুর্বল বলে যাদেরকে কোন সুবিধা ভোগের সামর্থহীন বলে গণ্য করে, মীনেরা তাদের নম্রভাবে সান্তনা দেবে। আপনার যদি ১০টাকার প্রয়োজন হয়, বা ৫০০ টাকার প্রয়োজন হয়, কিংবা বড় অংকের ধার দরকার হয়, কিংবা ন্যূনতম উৎসাহটুকুই দরকার হয় তাহলে মীনের কাছে যান। আপনাকে কোন বক্তৃতাও শুনতে হবে না আর কোন শ্রেষ্ঠত্ব-ব্যঞ্জক দৃষ্টিও সইতে হবে না।


আবার উদ্দীপনা ও হেসে খেলে বেড়াবার ক্ষেত্রে এবং বহির্মুখী আচরণের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সিংহের ছায়া সুস্পষ্ট। আবার একই সাথে কর্তব্যের প্রতি তাদের মকরদের মতোই  ত্যাগী এবং অবস্খান ও মর্যাদার প্রতি তাদের মধ্যে মকরসুলভ ঈর্ষাকাতরতাও রয়েছে। তাদের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে শনির বিষণíতার প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। বিক্ষিপ্ত শব্দটি হয়তো উপযুক্ত হলো না, কেননা প্রভাবটা খুব একটা কম নয়। চাঁদ-শাসিতদের মতোই হয়তো মেজাজী এবং মুডি সে এবং সিংহের মতোই উজ্জীবিত। টিজ করা এবং বিশ্লেষণ করায় তার মধ্যে কুম্ভের প্রতিকৃতি খুঁজে পাওয়া যাবে।


মেষের আদর্শবাদীতা এবং প্রাণোদ্দীপনাও প্রবলভাবে তার মধ্যে রয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে তার উপর হয়তো মঙ্গলের-প্রভাব কাজ করবে না। মীনেরা মিথুনদের মতোই অতি দ্রুত চলাফেরা করে এবং হয়তো কথা বলা এবং চিন্তাতেও সে মিথুনদের মতোই দ্রুত। আবার হয়তো তার মধ্যে অলসতা এবং শান্তিপ্রিয়তা আপনাকে বৃষের কথা মনে করিয়ে দেবে। বুধের ধূর্ততাময় বিচারবুদ্ধি, শুক্রের কোমল সৌকুমার্য, বৃশ্চিকসুলভ রুক্ষতাহীন কিন্তু বৃশ্চিকের ছলা-কলার সংমিশ্রণ দেখা যায় তার চরিত্রে।



প্রতিটি বায়ু-সূচক রাশির বিতর্কের প্রতি ভালোবাসা, প্রতিটি পার্থিবতা-সূচক রাশির নৈসর্গের প্রতি ভালোবাস এবং প্রতিটি আগুন-সূচক রাশির  জ্বলজ্বলে উচ্চাভিলাষ মীনদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে মিশে গেছে। কিন্তু কোন একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ে সে স্খির কিংবা আন্তরিকভাবে গাম্ভীর্যপূর্ণ এমন নয়। মীন সবসময়ই বিবর্তনশীল, আর এই দৃষ্টিকোণ থেকে তার চরিত্র বিশুদ্ধ। তবে তার যে বৈশিষ্ট্যটি অন্যান্য রাশিগুলো থেকে পৃথকত্ব দেয় সেটা হলো নিজেকে ভুলে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে এক করে দেখবার তার অসাধারণ ক্ষমতা। মীনেরা সঙ্গীত এবং চিত্রকলা ভালোবাসে। হয়তো অন্যান্য রাশিগুলোর সম্মিলিত বৈশিষ্ট্যই তাকে বৈচিত্র্যময় চেতনার অধিকারী করেছে। তার নিজের গভীর জ্ঞান এবং সমবেদনা-বোধ শুধুই তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য - এই জ্ঞান প্রতিটি মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে সে কুড়িয়ে নিয়েছে। এখন নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন যে আপনার মীন বন্ধুটির আচরণ কখনও কখনও ধাঁধাঁময়, এবং কখনও কখনও অদ্ভুতভাবে খাপছাড়া ও খামখেয়ালিপূর্ণ হয়ে ওঠা মোটেও অস্বাভাবিক নয়?



মীনেরা ভাবে যে তারা অনন্তকাল ধরে বাঁচতে সক্ষম, এবং তারা এমনসব কাজ করে যেটা তাদের এই বিশ্বাসের প্রতি কোমল আবেগকে ফুটিয়ে তোলে। মীনেরা সাধারণত নিজেদের প্রতি তেমন খেয়াল রাখে না। এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে মীনেরা তাদের অতিরিক্ত শক্তিটুকু (যদিও অতিরিক্ত শক্তি খুব বেশি তাদের মধ্যে নেই) আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্যার্থে এবং বন্ধুদের দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে খরচ করে ফেলে। আর্থিক কিংবা মানসিক সমস্যা তাদের শারীরিকভাবে দুর্বল করে দিতে যথেষ্ট। তাদের শরীর ততোটুকু শক্তিশালী নয় যে একবার ভেঙ্গে পড়লে আবার পুনরুদ্ধার করা যাবে। মীনদের উচিত তাদের শক্তি জমিয়ে রাখা। এবং উদ্দীপনা, স্নায়বিক উত্তেজনা, শ্রান্তি ইত্যাদি যেন তাদের ধরাশায়ী করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। অন্যান্য মানুষের জরুরি অবস্খায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলা থেকেও বিরত থাকলে তাদের জন্যে ভালো হয়। নবজাতকদের মতো দুর্বল, কিন্তু ছোট বাচ্চাসুলভ প্রাণউদ্দীপনার অভাব (যদি তার জন্মকুষ্ঠিতে মঙ্গলের দৃঢ় কোন প্রভাব না থাকে), মীনদের পরিপাক প্রণালীকে বিলম্বিত করে তোলে। যে কারণে প্রায়ই ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর তাদের চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু এবং বিশ্রামহীন বলে মনে হয়।


যদিও মীনেরা প্রতিযোগিতায় যেতে আগ্রহী নয়, কিন্তু নেপচুনের দৃঢ় চাপ তাদের অনেককেই মঞ্চের দিকে ঠেলে দেয়। এমনকি লাজুক এবং আত্মকেন্দ্রিক মীনেরাও সেখানে গিয়ে নিজেদের সহস্র অনুভূতির অনুবাদ উপস্খাপনের প্রবল ক্ষমতাটি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। নিজেদের স্বভাবগত মলিনতা/আত্মবিশ্বাসহীনতা থাকা সত্ত্বেও মঞ্চে তারা শ্রেষ্ঠ শিল্পীর খ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়। অবশ্য এটা সম্ভব হয় যদি তারা রিহার্সালের একঘেয়ে এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রতি নিজেদের বিতৃষäা, নিজেদের বিষণíতা কাটিয়ে উঠতে পারে, এবং প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার জন্যে বছর কয়েক লেগে থাকতে পারে তবেই।


তবে মাঝে মধ্যে সমালোচকদের কিছু উক্তি মীনদের কোমল হৃদয়ে এতো তীব্র দাগ দিয়ে যেতে পারে, যা একজন উঠতি গোলাম মোস্তফাকে কিংবা একজন উঠতি হুমায়ুন ফরিদীকে দাবিয়ে দিতে যথেষ্ট। যদিও তাদের খ্যাতিটা খুব বেশি দূরে ছিলো না। স্মৃতিচারণ তাদের জন্যে কোন ব্যাপারই নয়। মীনদের স্মৃতিশক্তি অপূর্ব। অবশ্য চাঁদ কিংবা বুধের প্রভাব থাকলে, নিজেদের ফোন নম্বরটাও ভুলে যাওয়া তাদের পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়।



মীন সে হোক ফেরিঘাটের জেলে, কিংবা শিশু হাসপাতালের নার্স, তাদের প্রত্যেকের কাছেই জীবনটা একটা নাট্যমঞ্চ। মীনের চোখে এই মঞ্চের পুরোটা দৃশ্যই প্রতিফলিত হয় পলাতক এবং ক্ষণস্খায়ীত্বের সাক্ষ্যস্বরূপ। অধিকাংশ ঝড়েই নেপচুন-শাসিতরা প্রশান্ত সাম্য নিয়ে মুখোমুখি হয়। অসহায়ত্ব এবং নৈরাশ্যবোধ প্রায়শই তাদের মনে বাসা বাধে এবং অদ্ভুত ও অর্থহীন দু:স্বপ্ন তাদের অবচেতন মনের ভবিষ্যৎ চিন্তাগুলোকে প্রতিফলিত করে। মীনেরা যখন ভাবে যে কিছু একটা ঘটবে, তখন সাধারণত সেটা ঘটে যায়।



সে যদি আপনাকে পরামর্শ দেয় যে প্লেনে কিংবা গাড়িতে ভ্রমণ করার দরকার নেই, তাহলে ভালো হবে আপনি যদি হেঁটে কিংবা সাঁতরে যান। যেসব জ্যোতিষী একটি বয়স্ক আত্মার কথা বলে, তারা মূলত সেই ব্যক্তির কথাই বলে যে অনেক মানুষের গভীরে তাকিয়ে দেখেছে, এবং তাদের প্রত্যেকের জ্ঞানকেই নিজের মধ্যে গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মূলত মীনদেরকেই নির্দেশ করে, কেননা মীন হয়ে জীবন যাপন করা হয়ে উঠতে পারে ব্যক্তির জন্যে একটি কঠিনতম দায়িত্ব কিংবা পরিপূর্ণতার স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ। রাশিচক্রে মেষ যেখানে জন্মের প্রতীক, সেখানে মীন হলো মৃত্যু এবং অবিনশ্বরতার সূচক। রাশিচক্রের ১২তম রাশিটি হলো মীন। অন্য রাশিগুলোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত একটি জটিল রাশি। মীনের স্বভাবে অন্যান্য রাশিগুলোর বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ থাকে, আর সেটা বহন করা একজন মীন জাতকের পক্ষে যথেষ্ট কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কোন কিছু সুচারুভাবে সম্পাদন করা কিংবা যেকোন সময়ে বিশদের প্রতি তার মনোযোগী হয়ে ওঠার অসাধারণ ক্ষমতা এবং তার ভদ্র আচরণ এটাই প্রতিফলন করে যে কন্যার অন্তর্নিহিত জ্ঞানটুকুকে সে অর্জন করেছে। বিচার-বিবেচনার ক্ষেত্রে সে তুলার মতোই নিরপেক্ষ এবং সুবিচারক, এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাসের প্রতি তার ভালোবাসাটাও নিখুঁতভাবে তুলাদের বৈশিষ্ট্যকেই নির্দেশ করে। মজা করার ব্যাপারে মীনদের মধ্যে কর্কটসুলভ অদ্ভুত চেতনা, এবং কর্কটসুলভ সহানুভূতি ও বদমেজাজও তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কখনও কখনও এদের ধনুদের মতো খোলামেলা মন্তব্য  করতে এবং মহানুভবতা দেখাতে প্রত্যক্ষ করা যায়।


No comments:

Post a Comment